ভারতের রাইড শেয়ারিং কোম্পানি ওলা গত ৭ মাসে ৭০ হাজারের বেশি এস১ প্রো ইলেকট্রিক স্কুটার (ই-স্কুটার) বিক্রি করেছে। দেশটির বিশ্লেষকরা জানান, অতীতে কেবল একটি মডেল দিয়ে স্কুটার বিক্রিতে এমন সাফল্য আসেনি অন্য কোনো গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের। অতীতে এমন নজির ভারতের অন্য কোনো গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নেই। ঢিমেতালে যেখানে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ই-স্কুটার বিক্রি করছে, সেখানে মাত্র একটি মডেল দিয়ে বাজিমাত করেছে ওলা। প্রথম ইউনিট বিক্রি শুরুর সাত মাসের মাথায় প্রতিষ্ঠানটির এস১ প্রো বিক্রি হলো ৭০ হাজারের বেশি। এটাই এখন তাদের ফ্ল্যাগশিপ প্রোডাক্ট। প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৫ আগস্ট লঞ্চ হয়েছিল এ ব্র্যান্ড ওলাএস১ প্রো। দাম রাখা হয়েছিল ১ লাখ ৩০ হাজার রুপি। ডেলিভারি শুরু হয় গত ডিসেম্বর মাস থেকে। গুণগত মান ও কারিগরি ত্রুটি নিয়ে একাধিক অভিযোগ সত্ত্বেও বিক্রিতে নজরকাড়া সাফল্য স্বস্তিতে রাখছে ওলাকে। ই-স্কুটার বিক্রির এ নতুন মাইলফলক অর্জনের কথা ‘মিশন ইলেকট্রিক ২০২২’ নামে ভার্চুয়াল ইভেন্টে ঘোষণা করেন ওলার কর্ণধার ভাবিশ আগরওয়াল। একই অনুষ্ঠানে ওলা তাদের এস১ স্কুটারটি রি-লঞ্চ করেছিল। এটি এস-১প্রো-এর সাশ্রয়ী মডেল হিসেবে বাজারে আনা হয়েছে, যার দাম ৯৯ হাজার ৯৯৯ রুপি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সামান্য কিছু পরিবর্তন ছাড়া দৃশ্যত দুটি মডেল প্রায় সমান। স্থানভেদে দেশটির বিভিন্ন বাজারে ভিন্ন দামে পাওয়া যাবে এ দুই মডেল। ওলা এস১ প্রো ই-স্কুটারে রয়েছে একটি ৪ কিলোওয়াট আওয়ার লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি প্যাক। জাপানের বহুজাতিক হেলমেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আরাইয়ের প্রশংসাপত্র পেয়েছে এ ব্র্যান্ডটি। এর প্রাপ্ত রেঞ্জ ১৮১ কিলোমিটার। তবে কম গতিতে ৩০০ কিলোমিটার পথ পার করার রেকর্ড গড়েছে ব্র্যান্ডটি। বেশ কয়েকজন এস১ প্রো ব্যবহারকারী এ অসাধ্য সাধন করে ব্যবহারকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ইকো মোড ছাড়া নর্মাল, স্পোর্টস ও হাইপার মোড রয়েছে এতে। একটি হাইপার ড্রাইভ ইলেকট্রিক মোটরসহ এসেছে স্কুটারটি, যার সর্বোচ্চ আউটপুট ৮ দশমিক ৫ কিলোওয়াট (১১ দশমিক ৩ বিএইচপি) ও ৫৮ এনএম টর্ক। ওলা জানায়, রেগুলার চার্জারে স্কুটারটি সম্পূর্ণ চার্জ থেকে ৬ দশমিক ৫ ঘণ্টা লাগে। এর ঘণ্টা প্রতি সর্বোচ্চ গতিবেগ ১১৬ কিলোমিটার। ফিচারের তালিকায় রয়েছে একটি ৭ ইঞ্চি টাচস্ক্রিন কনসোল, যেটি পরিচালনা করে মুভওএস২.০ সফটওয়্যার। এছাড়া ব্লুটুথ কানেক্টিভিটি, নেভিগেশন, মিউজিক ও ক্রুজ কন্ট্রোলসহ অন্যান্য ফিচার রয়েছে। ওলা জানায়, চলতি বছরের নভেম্বরে তারা মুভওএস২.০ সফটওয়্যার আপডেট করবে। ওলা ই-স্কুটার আনলক করার তিনটি উপায় দেয়া হয়েছে। স্মার্টফোন অ্যাপ দিয়ে খোলা যাবেÑস্কুটারটির স্ক্রিনে পাসওয়ার্ড দিয়ে আর স্কুটারটির কাছে গেলে প্রক্সিমিটি সেন্সরের সাহায্যে। যাদের চাবি হারানোর ভয় রয়েছে, তাদের জন্য এ বৈশিষ্ট্যটি আদর্শ। এ স্কুটারটি মিলবে ১০টি ভিন্ন রঙে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছে কালো, সাদা, নীল, লাল, হলুদ ও বেগুনি রঙের ব্র্যান্ডগুলো। ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের ওলা ফিউচার ফ্যাক্টরিতে তৈরি করা হচ্ছে এ স্কুটারগুলো। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বছরে ১ কোটি স্কুটার উৎপাদন করার সক্ষমতা অর্জন করা। দেশটিতে দ্রুতগতিতে বাড়ছে বৈদ্যুতিক স্কুটারের বাজার। তাই এখন থেকে সেই বাজার দখল করতে চায় ওলা। চলতি মাসের শুরুতে ওলা এস ১-এর জন্য আগাম বুকিং শুরু হয়। স্কুটারটি ওলার পক্ষ থেকে সরাসরি গ্রাহকের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে। গ্রাহকের সুবিধার্থে বিক্রির জন্য কোনো ডিলারের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এদিকে ২০২৪ সালের গ্রীষ্মে ভারতে চার চাকার ইলেকট্রিক ভেহিকেল (ইভি) আনার ঘোষণাও দিয়েছে ওলা। সে গাড়ির দাম ৪০ থেকে ৫০ লাখ রুপি হতে পারে বলে জানান ভাবিশ। এ দামের মধ্যে ভারতে এখন পর্যন্ত সফল ব্যবসা করেছে একমাত্র টয়োটা ফরচুনার। ধারণা করা হচ্ছে, ওলার চার চাকার গাড়ির রেঞ্জ হবে ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। পুরোটা পথ একবার চার্জ দিয়ে পাড়ি দেয়া যাবে।