রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে লিগ্যাল এইড প্যানেল আইনজীবীদের জন্য এডিআর কর্মশালা এবং জেলাভিত্তিক সেরা প্যানেল আইনজীবীদেরকে সম্মাননা স্মারক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা এবং বাংলাদশে ইউএসএইডের ‘প্রমোটিং পিস অ্যান্ড জাস্টিস একটিভিটি’ নামের কর্মসূচির আওতায় এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচারপ্রাপ্তিতে অসমর্থ জনগণকে আইনগত সহায়তা দিতে জাতিকে উপহার দেন ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’। এর মাধ্যমে শুরু হয় দেশের অসহায় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির আইনি অধিকার নিশ্চিত করার যাত্রা।’ আনিসুল হক বলেন, ‘বর্তমান সরকার আইনি সহায়তা কার্যক্রমকে গতিশীল ও সেবাবান্ধব করে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য ঢাকায় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব জেলায় লিগ্যাল এইড অফিস প্রতিষ্ঠা করেছে। উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আইন সংশোধনের মাধ্যমে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার এবং প্যানেল আইনজীবীদের নেতৃত্বে বিকল্প পন্থায় বিরোধ নিষ্পত্তি হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ২০১৯ সালে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে লিগ্যাল এইড অফিসারের কাজকে বিচারিক কর্ম হিসেবে গণ্য করেছি, ফলে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিকে এখন বিচারিক কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।’ আইনমন্ত্রী জানান, এছাড়া জেলা পর্যায়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষ আইনজীবীদের প্যানেলভুক্ত করার মাধ্যমে ভিকটিমের আইনি সহযোগিতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্যানেল আইনজীবীগণ যাতে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারেন সেজন্য তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৬ শত ৬৯ জন প্যানেল আইনজীবীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ‘প্যানেল আইনজীবীগণের কাজের স্বীকৃতি দেওয়ার লক্ষ্যে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা এবং ইউএসএইডের প্রমোটিং পিস অ্যান্ড জাস্টিস এক্টিভিটি যৌথভাবে লিগ্যাল এইড প্যানেল আইনজীবীগণকে সম্মাননা স্মারক প্রদানের জন্য আজকের এই আয়োজন করেছে। এ লক্ষ্যে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা কর্তৃক নির্বাচিত প্রকল্প এলাকার সেরা ৪০ জন প্যানেল আইনজীবীর জন্য দিনব্যাপী এডিআর বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য, লিগ্যাল এইড প্যানেল আইনজীবীদের কাজকে দেশব্যাপী প্রচার করা, যাতে করে অন্যান্য আইনজীবীগণ এ কাজে উদ্বুদ্ধ হন, আইনি সহায়তার মামলাগুলো গ্রহণ করেন এবং দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, গত দুই বছরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সত্ত্বেও লিগ্যাল এইড অফিসগুলোর মাধ্যমে আইনগত সহায়তা কার্যক্রম, আইনি পরামর্শ এবং এডিআর পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তি কার্যক্রম সফলতার সাথে চালু রাখা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতেও বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনি পরামর্শ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। বিচারক, আইনজীবী, সরকারি-বেসরকারি সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন পেলে সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রম আরও কার্যকর, গতিশীল ও শক্তিশালী হবে। অনুষ্ঠানে জেলাভিত্তিক ৪০ জন সেরা প্যানেল আইনজীবীর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন আইনমন্ত্রী। আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদশে ইউএসএইড এর ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড গভর্ন্যান্স অফিসের পরিচালক ক্রিস্টিন ওয়ালস, প্রমোটিং পিস এন্ড জাস্টিস একটিভিটির চিফ অব পার্টি হিদার গোল্ডস্মিথ অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা দেন।