আরএম সেলিম শাহী, শেরপুর প্রতিনিধিঃ
শেরপুরে ঝর ও শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধানসহ সবজি আবাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হঠাৎ করে শিলাবৃষ্টিতে ফসল হারিয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। শিলাবৃষ্টিতে মাটির সাথে লেপ্টে যাওয়া পাকা ধানের ক্ষেত দেখে কৃষকের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে বাতাস। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) ভোররাতে সেহরির পর দমকা হাওয়াসহ শিলা বৃষ্টি শুরু হয়। আর এতে পাকা ও আধা পাকা ধানসহ সবজি ফসল মাটিতে মিশে গেছে।
দমকা হাওয়ার সাথে শিলাবৃষ্টিতে জেলার সদর উপজেলা, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, এতে অন্তত ১শ হেক্টর জমির বোরো আবাদের ক্ষতি হয়েছে। সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপনে আরো সময় লাগবে।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজিরচর, কুড়িকাহিনীয়া, গোসাইপুর, গরজড়িপা, ভেলুয়া, শ্রীবরদী ইউনিয়নে ঘুরে দেখা গেছে, ভয়াবহ শিলা বৃষ্টি ও ঝরে বিস্তৃর্ণ সোনালী-সবুজ ধান ক্ষেত মাটিতে মিশে রয়েছে। কোথাও নিচু এলাকায় বৃষ্টিতে ধান গাছ নুয়ে পড়ে তলিয়ে গেছে; শিলার আঘাতে ঝরে গেছে সব ধান। কৃষকদের ফসল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কারো কারো ঘরবাড়ি, গাছ পালা ভেঙে গেছে, আহত হয়েছে গবাদি পশু। কৃষকরা যখন ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঠিক তখনই একদিনের মধ্যে সব আবাদি ফসল হারিয়ে তাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলো।
স্থানীয় কৃষকরা জানায়, করোনার কারণে এমনিতেই বিগত দুই বছর ধরে ধান আবাদে লোকসান লেগেই আছে। এর মধ্যে শিলাবৃষ্টিতে যে ক্ষতি হয়ে গেলো তা কিছুতেই পোষিয়ে উঠা সম্ভব না। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সহায়-সম্বল খরচ করে, রাত দিন পরিশ্রম করে বোরো আবাদ করে ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ফলনও হয়েছিলো ভালো। কিন্তু মুহুর্তেই তাদের সোনালী স্বপ্ন ভেঙে যায়। কৃষকরা আরও বলেন, আমাদের সব শেষ, ঋন করে ধানগুলো লাগিয়েছিলাম, ধান ও ভালো হয়েছিল। কিন্তু একদিনের মধ্যে সব আবাদি ফসল শেষ।
সদর উপজেলার চরশেরপুরের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, আমার এক একর জমির ধান ভোরে শিল পরে নষ্ট হয়ে গেছে। খুব দুঃশ্চিন্তায় আছি।
শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের ঝিনিয়া গ্রামের কৃষক মফিল উদ্দিন বলেন, ঋণ করে চার একর জমিতে বোরো আবাদ করেছি। এক রাতেই সব শেষ হয়ে গেছে। সব ধান পড়ে গেছে, এখন বউ পুলাপাইন নিয়ে কী খামু চিন্তাই আছি।
একই গ্রামের কৃষক জুলহাস আলী বলেন, আমি ১০ কাঠা জমিতে আবাদ করি। এতে আমার পুরো বছরের খাওন চলে। আজ ভোরে সব ধান শিলায় পড়ে গেছে।
ওই ইউনিয়নের লংগর পাড়া গ্রামের কৃষক চাঁন মিয়া বলেন, সেহরির পর শিল পইরা আমার এক একর জমির সব ধান পইড়া গেছে। এহন বউ বাচ্চা নিয়ে কী খামু।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে কোথাও কোথাও ফসলের ক্ষেতের পাশে দাঁড়িয়ে কৃষকদের হাওমাও করে কাঁদতে দেখে রায়। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সরকারের সহযোগিতার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের জন্য সরকার কিছু একটা ব্যবস্থা না করলে চলা মুশকিল হয়ে পড়বে। সামনেই ঈদ, এমনিতেই ফসল করতে গিয়ে অনেক দেনা হয়ে গেছে। এখন আমরা সত্যিই অসহায়, তাই আমরা সরকারের সহযোগিতা চাচ্ছি।’
জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে বলেন, ভোর রাতের শিলাবৃষ্টিতে শেরপুরে বোরো আবাদের ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় ১শ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে।