ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থার নাম। ইসলাম ধর্মের পরিধি ও বিস্তৃতি শুধু ইবাদত-বন্দেগির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং একজন মুসলিম সকাল থেকে সন্ধ্যা, আবার সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত কী করবে এবং কোন উপায়ে করবে তা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান এবং সুস্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি।’ -সুরা মায়িদা : ৪৮
কোনো উৎসব পালন সর্ম্পকে মহান আল্লাহ বলেন, ‘প্রতিটি জাতির জন্য আমি ধর্মীয় উপলক্ষ নির্দিষ্ট করে দিয়েছি, যা তাদেরকে পালন করতে হয়।’ -সুরা আল হজ : ৬৭
তবে কোনো নির্দিষ্ট মাসকে কেন্দ্র করে নিজের ইচ্ছা অনুসারে কোনো উৎসব পালনের অনুমতি ইসলাম দেয় না। অনেকের ধারণা, নতুন বছর কল্যাণ বয়ে আনে এবং পুরনো কষ্ট ও ব্যর্থতার গ্লানি দূর করে। তাই আমাদের দেশে নববর্ষ উপলক্ষে ভালো খাবারের আয়োজন ও নতুন পোশাক পরিধানের রীতি চালু রয়েছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন শোভাযাত্রা ইত্যাদিরও ব্যবস্থা হয়। কিন্তু ইসলাম আদৌ এমন কোনো কথা ও কাজ বিশ্বাস সমর্থন করে না। বরং নতুন বছরের সঙ্গে কল্যাণ আসে এ ধারণা আদিযুগের প্রকৃতিপূজারী মানুষের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণার অংশবিশেষ। আদিযুগের এমন কর্মকাণ্ড আজকের আধুনিক যুগের প্রগতিশীল মানুষের কাছে তা করণীয় বিষয় হয়ে উঠেছে। কারণ মানুষের অন্ধভক্তি ও ভালোবাসাকে প্রকৃতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সৃষ্টির মধ্যে আবদ্ধ করে তাদেরকে শিরকে লিপ্ত করানো শয়তানের সুক্ষ্ম ফাঁদ, এটাও তার একটি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তাকে ও তার জাতিকে দেখেছি, তারা আল্লাহকে ছেড়ে সূর্যকে সিজদা করছে এবং শয়তান তাদের কার্যাবলীকে তাদের জন্য শোভনীয় করেছে।’ -সুরা আন নামল : ২৪
শিরক জঘন্যতম গোনাহ। তওবা ছাড়া মহান আল্লাহ এ গোনাহ ক্ষমা করেন না। শিরকে লিপ্ত থাকা অবস্থায় মৃত্যু হলে তাদের জন্য জান্নাত হারাম এবং জাহান্নাম নির্ধারিত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যে কেউই আল্লাহর অংশীদার স্থির করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন, আর তার বাসস্থান হবে অগ্নি এবং জালেমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।’ -সুরা মায়িদা : ৭২
শিরকমুক্ত জীবন পরিচালনা করা মুমিনের অন্যতম গুণ। অন্যদিকে জাঁকজমকপূর্ণভাবে নববর্ষ পালন সম্পর্কে ইসলামের কোনো ভিত্তি নেই। তবে নববর্ষ পালন সম্পর্কে হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘মুমিনের প্রতিটি দিনই তো নববর্ষ।’ কারণ মুমিন প্রতিদিন রাতে তার আমলের হিসাব-নিকাশ করবে এবং নবউদ্যেমে নেক আমল করতে উৎসাহী হবে। মুমিন জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করা। তাই মুসলমানদের জীবনের প্রতিটি কাজের জড়িয়ে থাকবে তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভালোবাসা। ইসলাম মানুষের জন্য অকল্যাণ এমন প্রতিটি কাজ থেকেই বিরত থাকতে বলেছে। ইসলাম আনন্দ-উৎসব উদযাপনের অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু তার নির্দিষ্ট সীমারেখা টেনে দিয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, নববর্ষের উৎসব উদযাপনের এই দিনে ইসলামি রীতি উপেক্ষা করে নামধারী কিছু মুসলিম ধর্মবিরোধী নানা কার্যকলাপ ও অপসংস্কৃতির অনুসরণ করছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিবেকবান মানুষের উচিত এমন কাজ থেকে বিরকত থাকা। প্রকৃত মুমিনের উচিত এসব বৃথা ও অর্থহীন যাবতীয় কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা। সেই সঙ্গে নতুন বছর আগমনের সঙ্গে সঙ্গে সত্যিকারের মুমিনের করণীয় হচ্ছে- আত্মজিজ্ঞাসা করা। জীবন থেকে একটি বছরের সমাপ্তি ঘটেছে, এ জন্য মহান আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায় করা এবং নিজের ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। নতুন বছরে কোন উপায়ে মহান প্রভুর প্রিয় বান্দা হওয়া যাবে তার পথ খোঁজা, নতুন বছর যেন সবদিক থেকে আমাদের জন্য কল্যাণকর হয়, সেই দোয়া করা।