বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) এক কর্মকর্তা বলেন, একটি গণনা পদ্ধতিতে পদ্মা সেতুর টোলের হার নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আগামী ৩৫ বছরের মধ্যে দেশের বৃহত্তম সেতুটির নির্মাণ ব্যয় পুনরুদ্ধার হবে। তিনি বলেন, সেতুটি অভ্যন্তরীণ অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে। বিদেশি ঋণ বা যেকোনও ধরনের অনুদান বাতিল করে অর্থ মন্ত্রণালয় বিবিএকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। যা আমাদের ৩৫ বছরের মধ্যে এক শতাংশ সুদের হারে পরিশোধ করতে হবে। ১৪০ ত্রৈমাসিক কিস্তিতে ঋণের এক শতাংশ করে পরিশোধ করতে হবে উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন-ভ্যাট, ট্যাক্স, সেতুর ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি মাঝে মাঝে নদীশাসনের বিষয়গুলো বিবেচনা করে টোলের হার নির্ধারণ করা হয়েছে। বিবিএর এক বিবৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মেগা-কাঠামোর নকশা প্রণয়নের সময় নেয়া ২১১ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে বাড়তি ৩৪০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে। এতে বলা হয়, সেতু ব্যবহারকারী যানবাহন অপারেটরদের ফেরিতে যে ভাড়া দিতেন, সেটার চেয়ে গড়ে ৫০ শতাংশ বেশি দিতে হবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) মাওয়া এবং জাজিরার মধ্যে ফেরিতে যানবাহন পারাপারে ২০২০ সালের নভেম্বরে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা আয় করেছে। বিবিএ একে অন্যতম ভিত্তি ধরে মাসে ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা টোল আদায়ের আশা করছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, তবে এটি আপাতত একটি প্রাথমিক অনুমান। ৩৫ বছরে নির্মাণ ও পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বোঝার জন্য এই পরিমাণ যথেষ্ট নয়। তিনি আরও বলেন, যানবাহন চলাচল বাড়বে এবং অগামী বছরগুলোতে সময়ে সময়ে টোলের হার পুন:নির্ধারণ করা হবে। যেমনটি বঙ্গবন্ধু সেতুর ক্ষেত্রে হয়েছে। বিবিএ কর্মকর্তারা জানান, নির্ধারিত সময়ের আগেই বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্মাণ ব্যয় পুনরুদ্ধার হয়েছে। ২০১০ সালে এক প্রকল্প পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বিশদ অর্থনৈতিক ও আর্থিক হিসাব অনুযায়ী, আগামী বছরগুলোতে সেতুতে মাসিক টোল আদায় হবে ১৩৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আর বছরে আয় হবে ১ হাজার ৬০৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। অর্থ বিভাগ এবং বিবিএ’র মধ্যে চুক্তির অধীনে ৩৫ বছরের ঋণ পরিশোধের কিস্তি হিসাবে সেতুতে যানবাহন চলাচলের প্রথম বছরে ৫৯৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। যা বছরে বেড়ে দাঁড়াবে ১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। সরকার গত ১৭ মে পদ্মা সেতুর জন্য টোলের হার নির্ধারণ করে গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করে। বহুল প্রত্যাশিত সেতুটি ২৫ জুন যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, একটি মোটরসাইকেলের টোল হার ১০০ টাকা, কার ও জিপের জন্য ৭৫০ টাকা, পিকআপ ভ্যানের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসের জন্য ১ হাজার ৩০০ টাকা, ছোট বাস (৩১ আসনের) ১ হাজার ৪০০ টাকা, একটি মাঝারি বাস ২ হাজার টাকা, বড় বাস (৩-অ্যাক্সেল) ২ হাজার ৪০০ টাকা। ছোট ট্রাকের (৫ টন পর্যন্ত) জন্য ১ হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকের (৫ টন থেকে ৮ টন) ২ হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮ থেকে ১১ টন) ২ হাজার ৮০০ টাকা, ট্রাক (৩-অ্যাক্সেল) ৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং একটি ট্রেলারের (৪-অ্যাক্সেল) জন্য ৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রতিটি ট্রেলারে অতিরিক্ত অ্যাক্সেলের জন্য ৬ হাজার টাকার সঙ্গে ১ হাজার ৫০০ টাকা যোগ হবে।