কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি:
কুমিল্লার মুরাদনগরে জহিরুল ইসলাম নামে জামিনে থাকা এক বিবাদীকে থানার হাজতে আটকে রেখে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে সাড়ে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে এক পুলিশের এসআই’র বিরুদ্ধে।
রোবার দুপুরে ভোক্তভুগী জহিরুল মুরাদনগর থানার এসআই সমীর ভট্টাচাযের্যর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন সাংবাদিকদের কাছে। বিষয়টি নিয়ে দায়ী ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন জহিরুল ইসলাম। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,
উপজেলার কামাল্লা গ্রামের আয়েশা আক্তার বাদী হয়ে তার স্বামী জহিরুল ইসলাম সহ ৩ জনের বিরুদ্ধে কুমিল্লার আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় বিবাদীরা ৯ ফেব্রুয়ারি আদালত থেকে জামিনে এসে থানায় রি-কল জমা দেয়। ওইদিন বিকেলে মুরাদনগর থানার এসআই সমীর ভট্টাচাযের্যর নেতৃত্বে একদল পুলিশ রিকল থাকা সত্বেও বিবাদী জহিরুল ইসলামকে ধরে এনে থানার হাজত কক্ষে আটকে রাখে।
রাতেই সালিশ মিমাংসায় নিষ্পত্তি করার শর্তে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে এসআই সমীর ভট্টাচাযের্যর কাছ থেকে এলাকার লোকজন জহিরুল ইসলামকে ছাড়িয়ে নেয়। পরে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জহিরুল ইসলামের স্ত্রীর সাথে বিষয়টি মিমাংসার জন্য এসআই সমীর ভট্টাচাযর্য থানার গোলঘরে অনুষ্ঠিত সালিশ বৈঠকে জামিনে থাকা বিবাদী জহিরুল ইসলামকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ৩ দিনের মধ্যে ১ লাখ ৫০ হাজার ও ১৫ দিনের মধ্যে বাকী ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করার নির্দেশ দেন এসআই সমীর ভট্টাচাযর্য।
অন্যথায় এ টাকা সময়মতো পরিশোধ না করলে বিভিন্ন মামলা দিয়ে আজীবন জেলে পচে মরতে হবে বলে হুমকি দেয় জহিরুল ইসলামকে। নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলাম ১৭ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ ৫০হাজার টাকা পরিশোধ করেন। এবং বাকী ৩ লাখ টাকা এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ৮ মার্চ এসআই সমীর ভট্টাচাযের্যর হাতে তুলে দেন।
শালিস বৈঠকে কথা হয় বাদী আয়েশা আক্তার মামলা তুলে নেবার পর এসআই সমীর ভট্টাচাযের্যর কাছ থেকে টাকা বুঝে নিবে। কিন্তু গত ২৯মার্চ বাদী আয়েশা আক্তার রহস্যজনক কারনে আদালতে হাজির হয়নি। ফলে ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলাম বিষয়টি আদালতকে অবহিত করলে বিজ্ঞ বিচারক ওই টাকা পরবর্তী তারিখে আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
পরে ওইদিন জহিরুল ইসলাম এসআই সমীর ভট্টাচাযের্যর কাছে তার দেওয়া টাকা চাইলে, সমীর ভট্টাচাযের্য জানান তার কাছে কোন টাকা নেই। সে এ বিষয়ে কোনকিছুই জানে না। বাধ্য হয়ে ভুক্তভোগি জহিরুল ইসলাম গত ৭ এপ্রিল এসআই সমীর ভট্টাচাযের্যর এমন কর্মকান্ডের হাত থেকে রেহাই পেতে কুমিল্লার পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করেন। বিষয়টি দাউদকান্দি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারের তদন্তাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে কামাল্লা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাশার খাঁন বলেন, জরিমানার ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা সমীর ভট্টাচাযের্যর কাছে জমা রাখা হয়েছে। মামলা তুলে এসে বাদী আয়েশা আক্তার এসআই সমীর ভট্টাচাযের্যর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা ছিল। জহিরুল ইসলামের কাছে শুনেছি এখনো আয়েশা আক্তার মামলা তুলে নেই নাই।
এসআই সমীর ভট্টাচাযের্য টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। ইউপি সদস্য আনোয়ারা বেগম বলেন, আদালত থেকে জামিনে আসার পর পুলিশ কর্তৃক হয়রানী ও জেলের ভয় দেখিয়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকায় মিমাংসা করার ঘটনাটি সঠিক। অভিযুক্ত এসআই সমীর ভট্টাচাযের্যর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জহিরুল ইসলামকে জোরপূর্বক থানায় তুলে আনা হয়নি।
১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টিও সঠিক নয়। আর সালিশ বৈঠক করেছে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিরা। আমি পাশে বসা ছিলাম মাত্র।
মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হাশিম বলেন, এসআই সমীর ভট্টাচাযের্যর বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি করা হয়েছে সেটি সঠিক নয়। এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি নিষ্পত্তি করেছেন।