দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা করার প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে টানা ১২ দিনের আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন চা শ্রমিকরা। গতকাল শনিবার বিকাল ৪টায় আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেণ পাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবনাকে গ্রহণ করে তার সম্মান রক্ষার্থে আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’তিনি আরও বলেন, এই সিদ্ধান্ত প্রতিটি চা বাগানে নেতৃত্বের মাধ্যমে তৃণমূলের কাছে যাবে। শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন। এর আগে বিকাল ৩টায় শ্রম অধিদপ্তরের মৌলভীবাজারে ভানুগাছ রোডের বিভাগীয় কার্যালয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ ও শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন চা শ্রমিক নেতারা। বৈঠকের স্থল থেকেই আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চা শ্রমিক নেতা।দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে টানা আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন দেশের ২৪১টি চা বাগানের প্রায় সোয়া লাখ শ্রমিক। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে টানা ১২ দিনের আন্দোলনের পরিসমাপ্তি হলো।বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশীয় চা সংসদের আইন অনুযায়ী, শ্রমিকদের বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, রেশন, পানীয় জলের ব্যবস্থা, বোনাসসহ ন্যায্যমজুরি নিশ্চিত করবে বাগান মালিক। মজুরি বাড়ানোর জন্য প্রতি দুই বছর পরপর বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশীয় চা সংসদের মধ্যে সমঝোতা বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে উভয়ের আলোচনায় ঐকমত্যের পর চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এই চুক্তি অনুযায়ী, পরে দুই বছর শ্রমিকরা বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেয়ে যাবেন। চা শ্রমিকদের সঙ্গে সবশেষ দ্বি-বার্ষিক চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। এর পরপরই বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশীয় চা সংসদের কাছে ২০ দফা দাবিনামায় ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরি দাবি করেন। এ নিয়ে দফায় দফায় এ পর্যন্ত ১৩টি বৈঠকও হয় দুই পক্ষের মধ্যে। কিন্তু দাবির বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ করেন শ্রমিক নেতারা। শ্রমিক নেতারা জানান, গত ৩ আগস্ট চা বাগানের মালিকদের কাছে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর জন্য এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। কিন্তু তারা সেটায় কর্ণপাত করেননি। এর প্রতিবাদে ৯ আগস্ট থেকে সারাদেশের চা বাগানে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন শ্রমিকরা। কর্মবিরতি শেষে তারা কাজে ফিরছিলেন। এরপরও মালিকপক্ষ দাবি মেনে না নেয়ায় শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যায়। এর মধ্যে ১১ অগাস্ট হবিগঞ্জের ২৪টি চা বাগানের ১০ শ্রমিক নেতার সঙ্গে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের কর্মকর্তারা বৈঠকে বসলেও আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। ২৮ আগস্ট বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব রেখে শ্রমিকদের আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু শ্রমিকরা এতে সম্মত হননি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ আগস্ট ঢাকায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়। কিন্তু সেখানেও কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।