মনির খাঁন কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি:
কুমিল্লার দেবীদ্বারে কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া স্ত্রী সাদিয়া বেগমের (৩০) মৃত্যু হয়েছে। আইসিইউতে ৮ দিন থাকার পর শনিবার ভোর রাতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন নিহতের চাচা মো. আলমগীর হোসেন আলম।
নিহত সাদিয়া বেগম (৩০) উপজেলার পদ্মকোট গ্রামের ফরিদুল আলম অপু সরকারের মেয়ে এবং একই উপজেলার গুনাইঘর ইউনিয়নের গুনাইঘর গ্রামের নুরুল ইসলাম সরকারের ছেলে আসাদ সরকারের স্ত্রী।
জানা গেছে, গত শনিবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ৮টায় সাদিয়ার স্বামী আসাদ সরকার ঝগড়ার এক পর্যায়ে সাদিয়ার শরীরে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে সাদিয়ার আত্মচিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে আগুন নিভিয়ে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সেখানে সাদিয়ার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। অবশেষে ৮ দিন আইসিইউতে মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করার পর শনিবার রাতে না ফেরার দেশে চলে গেলেন সাদিয়া।
লাইফ সাপোর্টে থাকাকালে ভিডিও বার্তায় সাদিয়া জানায়, আমার স্বামী আমাকে এর আগেও কয়েকবার বলেছে- পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করব।
গত পাঁচ মাস ধরে যৌতুকের জন্য আমাকে প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছে। টাকা না দেওয়ায় আমার শরীরে কেরোসিন দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় আমার স্বামী।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত তিন মাস পূর্বে সাদিয়ার গর্ভে এক কন্না সন্তান জন্ম নিলে ডেলিভারি করার পর নবজাতক শিশুটি মারা যায়।
সাদিয়ার মা শামসুন নাহার বলেন, গত কয়েক মাস ধরে সাদিয়াকে যৌতুকের জন্য চাপ সৃষ্টি করত তার স্বামী। বিভিন্ন সময় শারিরিক নির্যাতনও সে করত। মেয়ে আমার কাছে প্রায় সময় কান্না করে জানাতো।
গত শনিবার হটাৎ করে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় ঘাতক আসাদ। পরে স্বামী আসাদ ঘটনাটি আড়াল করতে লোকসমাজের কাছে বলে আসছিল রান্না করার সময় সাদিয়ার গায়ের ওড়নায় আগুন লেগে যাওয়ার কথা।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘাতক স্বামী আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে থানায় সাদিয়ার বাবা ফরিদুল আলম (অপু) মামলা করলে বুধবার রাতে আসাদ সরকারকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠান পুলিশ।