একটি গাছ থেকে ৩০০ প্রজাতির আম উৎপন্ন করেছেন ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রবীণ চাষি কলিমউল্লাহ। ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে ১২০ বছর বয়সী এই আম গাছটিকে শতাব্দি ধরে আগলে রেখেছেন তিনি। উত্তরপ্রদেশের মলিহাবাদে নিজের বাগানে বসেই ৮২ বছর বয়সি বৃদ্ধ কলিমউল্লাহ এক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘কয়েক দশক ধরে প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে কঠোর পরিশ্রম করার পুরস্কার এই গাছের ভিন্ন ভিন্ন জাতের আম। খালি চোখে দেখলে মনে হবে এটি একটিমাত্র গাছ। কিন্তু কেউ যদি মনের দরজা খুলে দেখেন তা হলে বুঝতে পারবেন এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় আমের প্রতিষ্ঠান। কৈশোরে স্কুল থেকে অবসর নিলেও কলম চাষ করে আলাদা আলাদা আম গাছের মিশ্রণে কী করে নতুন নতুন জাতের আমের উৎপাদন করা যায়, তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো থেকে অবসর নেননি কলিমউল্লাহ। সেই থেকে সাতটি নতুন জাতের আম উৎপাদনের জন্য একটি গাছের যত্ন নেওয়া শুরু করেন তিনি। কিন্তু সেই গাছটি ঝড়ে পড়ে যায়।কিন্তু তাতেও দমে না গিয়ে চেষ্টা চালি যান তিনি। অবশেষে ১৯৮৯ সালে এই বহু পুরনো গাছের সন্ধান পান। পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন এই গাছ আলাদা আলাদা জাতের আম উৎপাদন করতে সক্ষম। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এই গাছে প্রায় ৩০০টি ভিন্ন প্রজাতির আম উৎপাদন করেছেন কলিম। প্রত্যেকটির স্বাদ, গঠন, রং, আকার আলাদা। বিভিন্ন প্রজাতের আমের আবার মজার সব নামও দিয়েছেন তিনি। বলিউড তারকা ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের নামানুসারেও একটি আমের নাম দিয়েছিলেন। এই আমটি তার তার জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি বলেও দাবি করেছেন তিনি। এছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ক্রিকেট তারকা শচিন টেন্ডুলকার, সোনিয়া গান্ধী অমিত শাহ এবং অখিলেশ যাদবের নামেও আমের নাম রেখেছেন। তিনি জানান, মানুষ মরণশীল, কিন্তু আম চিরকালীন। মানুষ যখনই শচিন আম খাবে, তখনই তারা ক্রিকেটার শচিনকে মনে করবে। নয় মিটার উচ্চতার এই আম গাছটির পুরু শাখাগুলিতে থাকা ঘন পাতা গরমকালে মনোরম ছায়া দেয়। গাছের পাতাগুলিও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। কোনো কোনোটা হলুদাভ, তো কোনো কোনো পাতা গাঢ় সবুজ রঙের।কলিমউল্লাহ জানান, আলাদা আলাদা জাতের আম মিশিয়ে সংকর আম তৈরির প্রক্রিয়া খুবই জটিল। খুব মনোযোগ দিয়ে একটি নির্দিষ্ট জাতের আম গাছের শাখাকে মূল গাছ থেকে কেটে নেওয়া হয়। পরে অন্য একটি জাতের শাখাকে ওই শাখার সঙ্গে জুড়ে টেপ দিয়ে আটকে রাখা হয়। তিনি চাইলে মরুভূমিতেও আম চাষ করতে পারবেন বলে গর্বকরে দাবি করেছেন। তবে তিনি যেখানে আম চাষ করেন সেই জায়গা থেকে ভারতের সব থেকে বেশি আমের উৎপাদন হয়। মলিহাবাদে প্রায় ৩০ হাজার হেক্টরের বেশি জায়গা জুড়ে আমের বাগান রয়েছে। ভারতের মোট আমের উৎপাদনের প্রায় ২৫ শতাংশ এখান থেকেই হয়। উদ্যান চাষে অনবদ্য অবদানের জন্য ২০০৮ সালে ভারত সরাকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত করে।