নতুন বছরের প্রথম দিনকে স্বাগত জানানোর জীর্ণ-পুরাতন আর সব গ্লানি মুছে নতুনের আহ্বানের পাশাপাশি প্রত্যাশা থাকে জাতির সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা। তাই পুরান বছরের শেষদিন আর নতুন বছরের প্রথমদিন বাঙালি জাতির জীবনে অবিচ্ছেদ্য এক উৎসবে পরিণত হয়েছে। আগের দুই বছর অতিমারি করোনা ভাইরাসের কারণে রমনার বটমূলে ছায়ানট, চারুকলা ইনস্টিটিউটের আয়োজনসহ সারাদেশে পহেলা বৈশাখের সব আয়োজন বন্ধ ছিল। যা ছিল দেশের স্বাধীনতার পর প্রথম কোনো ঘটনা। এখন করোনা ভাইরাসের দাপট নেই বললেই চলে। তাই দুই বছর পর বর্ণিল আয়োজনে পালিত হবে বাঙালির প্রাণের উৎসব। এরই মধ্যে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে ছায়ানট ও চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা সব আয়োজন শেষ হয়েছে। শুধু রাজধানীতেই নয় জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে প্রস্তুতি চলছে সারাদেশেই। আমাদের কাছে পয়লা বৈশাখ আসে সব সঙ্কীর্ণতা, কুসংস্কার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রেরণা হয়ে। নতুন উদ্যোমে বাঁচার শক্তি নিয়ে। যুগে যুগে জাতির জীবনে বড় বড় সঙ্কট, দুর্যোগ নেমে এসেছে, কিন্তু পহেলা বৈশাখের অনুপ্রেরণা আর সাহস নিয়ে সেই সব সঙ্কট, দুর্যোগ জয় করেছে তারা। শুধু তাই নয়, প্রতিটি অর্জনেও এই সাহস আর শক্তি অবদান রেখে গেছে। কেনান ধর্ম-বর্ণ ও দল-মত নির্বিশেষে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে পহেলা বৈশাখ।
আমরাও মনে করি, সেই কিছু লোক থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। যাদের কাজই হলো ধর্মের অপব্যাখ্যা করে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরি করা। সহিংসতা, দেষ বা ঘৃণা দিয়ে নয়, ভালোবাসার জয় সব সময়ই হয়। এ বছর নববর্ষের প্রতিপাদ্য ‘নব আনন্দে জাগো’। এই প্রতিপাদ্যেই তুলে ধরা হয়েছে নতুন এক সময়ের, নতুন এক আগামীর জন্য জেগে ওঠার। যে সময়ে থাকবে না করোনা ভাইরাস বা অন্য মহামারি। শোক-দুঃখ-জরা ভুলে সম্মৃদ্ধ এক সময়ের অপেক্ষায় বাঙালি জাতি। তবে কিছুটা শঙ্কা থেকেই যায়। আমরা করোনাকে জয় করতে পেরেছি সত্যি, কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিশ্বের দেশগুলোর বিভক্তি আরেক শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য অনেকটাই বেড়ে গেছে। তার কারণে বেড়ে গেছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। এটা শুধু বাংলাদেশেই না, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। এমন শঙ্কার পরও আমাদের প্রত্যাশা, নববর্ষ সবার জন্য বয়ে আনুক শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নতি। সব মানুষের মঙ্গল হোক। শুভ নববর্ষ-১৪২৯ ।