রাশিয়া ও ইউক্রেনে পণ্যের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে ডাক পরিবহন। সংঘাতের বাইরে থাকলেও বেলারুশের সঙ্গেও বন্ধ আছে ডাক যোগাযোগ। এ কারণে সংখ্যায় কম হলেও প্রয়োজনীয় নথি পাঠাতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই সমস্যার সমাধান হবে না।
প্রায় সাড়ে তিন মাসের উত্তেজনার পর ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। ২৪ ফেব্রুয়ারি হামলা শুরুর পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশ দুটির আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দেশগুলোতে জাহাজ ও উড়োজাহাজে করে পণ্য ও পার্সেল পরিবহন বন্ধ থাকায় এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, শীর্ষস্থানীয় জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মেডিটেরিয়েন শিপিং কোম্পানি (এমএসসি) ১ মার্চ থেকে রাশিয়ায় পণ্য পরিবহন বন্ধ করে। এমএসসিকে অনুসরণ করে ডেনমার্কভিত্তিক জাহাজ পরিচালনা প্রতিষ্ঠান মায়ের্সক, জার্মানিভিত্তিক হ্যাপাগ লয়েড এবং সিঙ্গাপুর-জাপানভিত্তিক ওয়ান লাইন।
এছাড়া একাধিক শিপিং কোম্পানি এখনো নিষেধাজ্ঞা না দিলেও তারা এখন পণ্যের বুকিং নিতে চাইছে না।
অন্যদিকে ইউক্রেনে রুশ হামলা নিয়ে নিষেধাজ্ঞার জেরে বিশ্বের ৩৬টি দেশের এয়ারলাইনসের ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে রাশিয়া। দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, স্পেন, ইতালি ও কানাডাও রয়েছে।
দেশ থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেনে সাধারণত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ডাক সেবা দিয়ে থাকে। তবে সরকারি ডাক সেবা দেশ দুটোতে প্রদান করা হয় কি না, সে বিষয়ে তথ্য দিতে পারেননি ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সিরাজ উদ্দিন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, সম্ভবত দেশ দুটোর সঙ্গে আমাদের ডাক যোগাযোগ নেই।
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ডাক ও পার্সেল পাঠায় ডিএইচএল, ফেডএক্স, ইউপিএস, টিএনটি, অ্যারামেক্স, ওসিএসসহ ১০টির মতো প্রতিষ্ঠান।
অন্যদিকে এসএ পরিবহন, কন্টিনেন্টাল, ই-কুরিয়ারসহ একাধিক দেশি প্রতিষ্ঠান বিদেশে ডাক পার্সেল পাঠায়।
দেশে ডিএইচএল, ফেডএক্স, ইউপিএসের এজেন্ট গ্লোবাল মেইল এক্সপ্রেস। প্রতিষ্ঠানটির সিইও মো. কামাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, গত ২৪ তারিখ যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেনে পার্সেল পাঠানো বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ তা চালু হবে তা জানা নেই। কুরিয়ার অ্যাসোসিয়েশন মিটিং করে আমাদের জানিয়েছে রাশিয়ায় শিপমেন্ট যাবে না।
তিনি বলেন, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের কিছু ডকুমেন্টস রাশিয়ায় পাঠানো হয়। যদিও এর পরিমাণ খুবই কম। কিন্তু প্রিন্সিপাল কোম্পানি যদি না নেয়, তাহলে তো আমরা নিতে পারি না।
ই-কুরিয়ারের সিইও বিপ্লব ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, রাশিয়ায় পার্সেল পাঠানোর ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। সেখানে সব ধরনের পার্সেল পাঠানো যায় না। পার্সেল পাঠাতে আগে থেকে অনুমতি নিতে হয়। তবে ব্যবসায়িক নথিপত্র পাঠানো যায়। হামলা শুরুর পর থেকে সেটাও এখন বন্ধ আছে। আর ইউক্রেনে খুব কম পার্সেল যায়। ওরা আসলে ইমপোর্ট ওরিয়েন্টেড দেশ না, আমাদের পণ্য কম যায় সেখানে।
কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান কন্টিনেন্টাল কুরিয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল ইমরান চিশতি জাগো নিউজকে বলেন, কানেক্টিং ফ্লাইট বন্ধ থাকায় কুরিয়ার সেবা বন্ধ আছে দেশ দুটিতে। কবে নাগাদ চালু হবে তা আসলে যুদ্ধ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে। এখন রাশিয়া, ইউক্রেনের পাশাপাশি বেলারুশেও নথি, পার্সেল পাঠানো বন্ধ আছে।
২০২০-২০২১ সালে রাশিয়ায় ১১৪ কোটি ডলারের পণ্য পাঠিয়েছেন রপ্তানিকারকরা। এর মধ্যে পোষাক রয়েছে ৫৯ কোটি ডলারের। অন্যদিকে ইউক্রেন, বেলারুশে যথাক্রমে ১০০ ও দেড়শ কোটি ডলারের পণ্য গেছে।
সূএ:jago news