রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়ছে একের পর এক সোনাপাচারের বড় চালান। এর সঙ্গে সোনা পাচার চক্রের বাহকরা মাঝেমধ্যে ধরা পড়লেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন হোতারা। ফলে সোনার পাচার বেড়েই চলছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শুধু শাহজালাল বিমানবন্দরেই গড়ে প্রতি মাসে জব্দ করা হচ্ছে অবৈধভাবে আসা অন্তত দেড় মণ সোনা। গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজের কার্টন, ময়লার ঝুড়ি, বিমানের সিট, টয়লেট, লাগেজসহ যাত্রীর শরীরের গোপন অঙ্গে বহন করা হচ্ছে সোনার এসব অবৈধ চালান। সোনার অবৈধ কারবার ঠেকাতে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তৎপরতায় কয়েক দিন পরপরই জব্দ করা হচ্ছে সোনার চালান। ঢাকা কাস্টম হাউস জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) অবৈধভাবে আনা ২৭০ কেজি ১৪৬ গ্রাম (ছয় মণ ৩০ কেজি) সোনা উদ্ধার করা হয়েছে। এর আনুমানিক বাজারমূল্য ১২৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৩৩ কেজি ৪৫২ গ্রাম, ফেব্রুয়ারিতে ৮৫ কেজি ২৭৭ গ্রাম, মার্চে ৪৩ কেজি ১৮০ গ্রাম, এপ্রিলে ৭৭ কেজি ৯৪১ গ্রাম এবং মে মাসে ৩০ কেজি ২৯৬ গ্রাম সোনা আটক করা হয়েছে। এই চোরাচালানের বেশির ভাগই এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। এর মধ্যে গত পাঁচ মাসে ২৫ মামলায় আটক করা হয়েছে ২৫ জনকে। কাস্টম হাউসের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে ১৮ মণ ৩৬ কেজি ১৪৯ গ্রাম, ২০১৯ সালে ১৬ মণ ২৩ কেজি ২৭৮ গ্রাম, ২০২০ সালে ৮ মণ ৩২ কেজি (করোনায় প্রায় তিন মাস ফ্লাইট বন্ধ ছিল), ২০২১ সালে ১৭ মণ ১৫ কেজি সোনা জব্দ করা হয়। গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে বৈধভাবে তিন হাজার ৯৮০ কেজি সোনা আমদানি করা হয়েছে। এই সোনা থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৫৩৪ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত কয়েক বছরের সোনা জব্দের সঙ্গে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে জব্দ করা সোনার হিসাব বলে দিচ্ছে চোরাচালান না কমে বরং বেড়েছে। এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক জানান, পাচারের সোনাসহ যাদের ধরা হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগ যাত্রী। এরই মূলত সোনা বহনকারী। বাংলাদেশে যাত্রীরা আসার সময় বিদেশের এয়ারপোর্টে চোরাকারবারিরা ওই যাত্রীদের কাউকে ম্যানেজ করে সোনার চালান দিয়ে দেন। বলে দেন যে এয়ারপোর্টে বা এয়ারপোর্টের বাইরে তাদের লোক আছে। তাদের কাছে পৌঁছে দিলেই হবে। বিনিময়ে ওই যাত্রীকে কিছু টাকা দেওয়া হয়। টাকার প্রলোভনে পড়ে যাত্রীরা সোনা আনতে রাজি হন। সূত্র জানায়, ২০২১ সালে সোনা চোরাচালানে জড়িত শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। একই বছরে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে ২০২টি। এ সময়ে বিমানের বেশ কিছু কর্মী সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকায় তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ঢাকা কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার (প্রিভেন্টিভ) মোহাম্মদ আবদুস সাদেক বলেন, ‘যাত্রীদের স্ক্যানিং এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যারা অবৈধভাবে সোনা আনছে, তাদের আটক করা হচ্ছে। কোনো ফ্লাইট ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলে শতভাগ চেক করা হচ্ছে। ’আগের চেয়ে সোনা চোরাচালান কমেছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা বলা কঠিন। তবে আমরা কাজ করছি। কিছু যাত্রী লোভে পড়ে বাহকের কাজ করছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের ধরাও হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একজন কর্মীর কাছ থেকে আট কেজি সোনার বার উদ্ধার করার ঘটনায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোনা চোরাচালানে বিমান বাংলাদেশের আরো অনেকে জড়িত। শাহজালাল বিমানবন্দরের বাইরে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর ও সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর থেকেও সোনার চোরাচালান জব্দ করা হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১৫ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়েছে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ১১ কোটি টাকা। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত ১১ মাসে ২০ কেজি সোনা জব্দ করা হয়েছে। এ সময় সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সিলেট বিমানবন্দর কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার আল আমিন বলেন, ‘সোনা চোরাচালানের ক্ষেত্রে আমরা যাদের আটক করি, মামলা দায়েরের পর তাদের থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলার দীর্ঘসূত্রতায় এদের অনেকে জামিনে বের হয়ে যায়। আবার কেউ শাস্তি ভোগ করে। ‘