বিদেশি মুদ্রার সংকটে রয়েছে জিম্বাবুয়ে। বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতির ধাক্কায় ক্রমে মুখ থুবড়ে পড়ছে দেশের অর্থনীতি। এই অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে স্বর্ণমুদ্রা বিক্রির সিদ্ধান্ত নিল সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ প্রসঙ্গে সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নর জন মঙ্গুদওয়া জানান, আগামী ২৫ জুলাই থেকে স্থানীয় মুদ্রা, মার্কিন ডলার ও অন্য বিদেশি মুদ্রায় বিক্রি হবে ওই স্বর্ণমুদ্রা। সোনার আন্তর্জাতিক মূল্যের ভিত্তিতে ওই মুদ্রা বিক্রি হবে বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য মুদ্রাস্ফীতি ও যুদ্ধের কবল থেকে অর্থনীতিকে বাঁচাতে এই ধরনের পদক্ষেপ অন্য দেশকেও এর আগে নিতে দেখা গিয়েছে। এবার সেই পথই অনুসরণ করল জিম্বাবুয়েও। গভর্নর জানান, উৎপাদন খরচের ভিত্তিতে নির্ধারিত মূল্যে জনসাধারণের কাছে বিক্রি করা হবে। ওই বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রতিটি স্বর্ণমুদ্রা শনাক্ত করা হবে একটি সিরিয়াল নম্বর দিয়ে। সহজে এটি নগদে পরিণত করা যাবে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। জিম্বাবুয়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ভিক্টোরিয়া ফলসের নামাঙ্কিত ওই স্বর্ণমুদ্রা ভেঙে নগদে পর্যবসিত করা যাবে এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মূলধন হিসেবে ব্যবহারও করা যাবে। আফ্রিকায় মুদ্রাস্ফীতির কারণে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি লেবাননের। এরপর রয়েছে মহাদেশের দুই দেশ জিম্বাবুয়ে ও সুদান। ২০১৯ সালে ডলার প্রচলনের এক দশক পর পুরনো মুদ্রা ফিরিয়ে আনে জিম্বাবুয়ে। তবু মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, শ্রীলঙ্কার মতোই বিদেশি মুদ্রার সংকটে শোচনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি গত মাসে দ্বিগুণের বেশি ১৯১ শতাংশ পড়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে মরিয়া দেশের প্রশাসন। তাই জানিয়ে দেয়া হয়েছে, এই মাসের শেষের দিকে চালু করা হবে স্বর্ণমুদ্রা। ২০০৮ সালে গোটা বিশ্ব আর্থিক সংকটে পড়ে। সে সময় থেকেই জিম্বাবুয়ের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়। পরিস্থিতি এতটাই নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ১০০ লাখ কোটি ডলারের ব্যাংক নোট ছাপতে হয়েছিল। আর্থিক সংকটের ছোবলে সেই থেকেই ধীরে ধীরে বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার ফুরিয়ে যেতে থাকে, যা বর্তমানে প্রায় নিঃশেষিত। এখন দেখার বিষয়, স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন করে এই পরিস্থিতি থেকে দেশটি মুক্তি পায় কি না। ভিক্টোরিয়া ফলসের নামানুসারে এই মুদ্রার নাম হবে মোসি-ও-তুনিয়া। এর অর্থ বজ্র তৈরিকারী ধোয়া। এর মাধ্যমে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসাও করা যেতে পারে। এই সোনার মুদ্রায় টরি আউন্স সোনা থাকবে। প্রসঙ্গত স্বর্ণ, রুপা ও প্লাটিনামের মতো মূল্যবান ধাতু পরিমাপের একক হচ্ছে টরি আউন্স। মধ্য যুগ থেকে চলে আসা এক টরি আউন্সে ৩১ দশমিক ১০ গ্রামের সমান হয়। ফিডেলিটি গোল্ড রিফাইনারি, অরেক্স ও স্থানীয় ব্যাংকগুলো বিক্রি করবে এই স্বর্ণমুদ্রা। দক্ষিণ আফ্রিকার এই দেশটিতে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি সাধারণ জনজীবনে প্রভাব ফেলেছে। এর আগে প্রবীণ নেতা রবার্ট মুগাবের প্রায় চার দশকের শাসনের সময় এমনটা দেখা গিয়েছিল। অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য প্রেসিডেন্ট এমারসন এই সিদ্ধান্তে সম্মতি দিয়েছেন। সম্ভাব্য অর্থনৈতিক দুর্দশা মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জিম্বাবুয়ে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। শ্রীলঙ্কায় মহাসংকট ডেকে আনা অনেক লক্ষণই এখন এই দেশে দৃশ্যমান। এছাড়া দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী পাঁচ বছরের জন্য মার্কিন ডলারকে বৈধ টেন্ডার হিসেবে চালুর পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল সুদের হার এ মাসে দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ২০০ শতাংশ হয়েছে।