সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখনও শুল্ক হার কমানোর প্রজ্ঞাপন জারি না হলেও, শুধুমাত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় নিত্যপণ্যের বাজারে দাম ব্যাপকভাবে নামতে শুরু করেছে। একদিনের ব্যবধানে সব ধরনের ভোজ্যতেলে প্রতি মণে ৩০০ টাকা এবং চিনিতে ১০০ টাকা কমেছে। আর শুল্ক হারের জটিলতা না থাকলেও ছোলায় কেজিতে ২ টাকা কমেছে।
লাগামহীন ভোজ্যতেলের বাজারে অবশেষে স্থিতিশীলতা ফিরতে শুরু করেছে। শুল্কহার কমানোর প্রজ্ঞাপন জারির আগেই মণ প্রতি ৩০০ টাকা করে কমাতে বাধ্য হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর মূল কারণ এখন অনেকটা ক্রেতাশূন্য ভোজ্যতেলের বাজার। তবে মিল মালিকেরা এখনও দর নির্ধারণ করে না দিলেও পাইকারি পর্যায়ে দাম কমার প্রভাব খুচরা পর্যায়ে পড়ছে না। এ বিষয়ে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মেসার্স আব্বাস সওদারের মালিক জাফর আহমদ বলেন, সরকার ভ্যাট তুলে দিয়েছে, তবে মিল মালিকরা এখনও আমাদের কোনো দর ঠিক করে দেয়নি। কিন্তু আমরা বাজারে খুবই কম দামে বেচাকেনা করছি। আমরা বর্তমানে প্রতি মণে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কম রাখছি। অপরদিকে ছোলার দামের বিষয়ে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আর এম এন্টারপ্রাইজের মালিক আলমগীর পারভেজ বলেন, ছোলার প্রচুর মজুত রয়েছে। দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। একটু বেড়েছিল, তবে এখন বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। রমজান মাসেও বাজার স্থিতিশীল থাকবে।
রমজান মাসের অন্যতম নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য ছোলা। নানা অজুহাতে রমজান মাস সামনে রেখে ছোলার দামও বাড়ানো হয়েছিল। সরকার এ ছোলার শুল্কহার কমানোর ঘোষণার একদিনের মধ্যে কেজিতে কমেছে ২ টাকা। অথচ ছোলার কোনো শুল্কহার নেই। একদিকে ক্রেতা সংকট, অন্যদিকে মজুতের দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার ভয়ে পণ্য ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন পাইকারি বিক্রেতারা। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মেসার্স হাজী স্টোরের মালিক জয়নাল আবেদীন টিটু বলেন, যারা অধিক মুনাফা নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তারা বর্তমানে আতঙ্কে পড়েছেন। বিশেষ করে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য আমদানি করা হয়েছে। কোনো জিনিসের সংকট নেই। সরকারের ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রভাব নিয়ে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মেসার্স তৈয়বিয়া ট্রেডার্সের পরিচালক সোলায়মান বাদশা বলেন, তেল, চিনি ও ছোলার ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি মণ পাম ওয়েলের দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কমে গেছে। তবে সয়াবিনের দাম খুব একটা কমেনি।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) পর্যন্ত প্রতি মণ চিনি ২ হাজার ৭৪৫ টাকায় বিক্রি হলেও, শনিবার (১২ মার্চ) তা ২ হাজার ৬৩০ টাকায় নেমে আসে। অর্থাৎ কেজিতে কমেছে অন্তত ২ টাকা। মজুদ ছেড়ে দেওয়ার কারণেই চিনির দাম কমছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। চিনি পর্যাপ্ত থাকার কথা জানিয়ে চট্টগ্রামে খাতুনগঞ্জের মেসার্স এ এম এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহমুদুল আলম লিটন বলেন, বৃহস্পতিবার সরকার যে ঘোষণা দিয়েছে, তার এখনও প্রজ্ঞাপন আসেনি। খবরের ওপর ভিত্তি করে ইতিমধ্যে বাজারে চিনির দাম কমেছে।
উল্লেখ্য, রমজানে বাংলাদেশে প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল, ৩ লাখ মেট্রিক টন চিনি এবং ৮০ থেকে ৯০ হাজার মেট্রিক টন ছোলার চাহিদা রয়েছে।