বর্তমান সময়ে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন। জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। ওইদিনই লিটারে সাত টাকা বাড়িয়ে সয়াবিন তেলের নতুন মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজেট ঘোষণাকে কেন্দ্র করে জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি, আগের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের বক্তব্যে প্রকৃত সত্য উঠে আসেনি। বাজেট ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নতুন নয়। সরকার সয়াবিন তেলের নতুন মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু অন্য অনেক পণ্যের দামই তো বেড়েছে। এতে প্রতীয়মান হয়, বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা থাকলে সেটির সুযোগ নেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। একটু অজুহাত পেলেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এর পক্ষে যুক্তিও দাঁড় করিয়ে ফেলেন। একসময় বাজার নিয়ন্ত্রণেই নিয়ে নেন, তখন বাজার অস্থিতিশীল হয়ে যায়।স্বাধীন পর্যালোচনায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, সার্বিক বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। সংস্থাটি ঢালাওভাবে বলেনি, একেবারে নির্দিষ্ট করে দেখিয়েছে। যেমন বর্তমান চালের বাজারে যে সরবরাহ রয়েছে, তাতে চালের এত উচ্চমূল্য হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। গত অর্থবছরের চেয়ে এ বছর চালের আমদানি ৬০ হাজার টন বেশি হয়েছে। মজুত ১২ লাখ মেট্রিক টন; সেটিও পর্যাপ্ত। এ পরিস্থিতিতে বাজারে চাল বেড়ে যাওয়া বাজার অব্যবস্থাপনারই দৃষ্টান্ত। শুধু চালের বাজারই নয়, ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল ও নিত্যপণ্যের বাজারÑসবখানেই বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা। বাজার ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা খোঁজেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। নইলে তারা কীভাবে ওই পণ্যের ব্যবসা করছেন, যে পণ্যের ব্যবসা করার অনুমোদন নেননি। যেহেতু তারা ধরা পড়ছেন না, তখন মনে করছেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের দুর্বলতা রয়েছে। তখন বাজারের নিয়ন্ত্রণে কারসাজি করেন তারা। বর্তমানে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বের সর্বত্র। এ বাস্তবতা মেনেই আমাদের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ কিছু সুযোগও নিয়ে আসে। কিন্তু এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে বৈধভাবে। আমাদের ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে যেন ‘কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ’ প্রবচনই বেশি প্রযোজ্য। কারণে-অকারণে ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজার, সরবরাহ কম এসব দোহাই দিচ্ছেন। অথচ তাদের গুদাম থেকে জব্দ করা হয় হাজার হাজার বস্তা পণ্য ! বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার সুযোগে প্রভাবশালীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। মূল্য স্থিতিশীল রাখতে বাজারের ওপর সরকারের নিবিড় নজরদারি থাকা দরকার। বাজার ব্যবস্থাপনায় তদারকি প্রয়োজন। এ সরকার স্বচ্ছতা ও জবাদদিহির সঙ্গে কার্যকর করার উদ্যোগ নিলে স্বার্থান্বেষী মহল কারসাজি করতে পারবে না। বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী, প্রতিযোগিতা কমিশন, ট্যারিফ কমিশন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, খাদ্যনিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত মন্ত্রণালয়সহ অংশীজনদের সমন্বয় থাকলে সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।