শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী দেশটির ১ হাজার ৫০০ একরের বেশি শুষ্ক ও পরিত্যক্ত রাষ্ট্রীয় জমিতে চাষাবাদ করার এক অভিযান পরিচালনা করবে। খাদ্য উৎপাদান বাড়ানো ও ভবিষ্যতের খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলায় এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানায় দেশটির কর্তৃপক্ষ। কৃষি অভিযান পরিচালনা করার লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার গ্রিন অ্যাগ্রিকালচার স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। খাদ্য কর্মসূচি বাড়ানো ও অগ্রসর করার জন্য এ কমিটির সদস্যরা কাজ করবেন। ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে সময় পার করছে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। অর্থনৈতিক মন্দায় প্রায় প্রতিদিনই দেশটির রূপ পরিবর্তন হচ্ছে। অর্থ, বিদ্যুৎ ও তেলের খরার পাশাপাশি দেশটিতে খাদ্যসংকটও মাথাচাড়া দিয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আমদানিকৃত খাদ্যদ্রব্যের ওপরও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ সংকটের কারণে অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত খাদ্য সরবরাহেও ঘাটতি দেখা দিতে পারে। খাদ্য, ওষুধ, রান্নার গ্যাস, জ্বালানি ও টয়লেট পেপারের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। শ্রীলঙ্কানরা রান্নার জন্য জ্বালানি ও গ্যাস কেনার জন্য দোকানের বাইরে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন।শ্রীলঙ্কা কাউন্সিল ফর অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ পলিসির প্রেসিডেন্ট গামিনি সেনানায়েক বলেন, খাদ্যের দিক থেকে আগামী কয়েক মাসে খুব কঠিন সময় আসবে। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশটি কয়েক মাস আগেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল। কিন্তু সার ও কীটনাশকসহ সব সিন্থেটিক কৃষি রাসায়নিক নিষিদ্ধ করায় দেশটিতে খাদ্য নিরাপত্তা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে। দেশটির ২০ লাখ কৃষকের ৩০ শতাংশ ভর্তুকিযুক্ত রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু হঠাৎ সারের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা তাদের পিছিয়ে দিয়েছে। কৃষি চাহিদা মেটাতে সরকার পর্যাপ্ত মাটির পুষ্টি উপাদান আমদানি করেনি বলে অভিযোগ করেছেন তারা। যে কারণে গত মার্চের শেষে মৌসুমের কৃষি উৎপাদনে পতন ঘটেছে। কৃষকরা উৎপাদন বন্ধ করে দেয়ায় দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ পর্যায়ে চলে যেতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, এ কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি যা বর্তমানে প্রায় ৩০ শতাংশে রয়েছে, তা আরও বাড়তে পারে। জৈব কৃষি পদ্ধতিতে চাষাবাদে শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে গড়ে চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। কিন্তু সে প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। আগামী মাসে সেনাবাহিনীর চাষাবাদ প্রকল্পে নেতৃত্ব দেবেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভিকুম লিয়ানাগে। চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জগথ কোডিথুওয়াক্কু প্রকল্পের তদারকি করবেন। তাদের সৈন্যরা প্রথমে কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, নির্ধারিত বীজ চাষের জন্য আগাছা বেছে কৃষিজমি প্রস্তুত করবেন। এ কাজে সহায়তা করবেন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের গভর্নর, জেলা ও বিভাগের সচিব, ভূমি কর্মকর্তা। শ্রীলঙ্কায় কৃষি মৌসুম হিসেবে পরিচিত মে মাস। চলতি বছর এ মাসের উৎপাদিত ফলনের সরকারি পরিসংখ্যান এখনও পাওয়া যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, এ মৌসুমে কৃষকদের ফলন ২০ থেকে ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, শ্রীলঙ্কার প্রধান কৃষিপণ্য চালের উৎপাদন দেশব্যাপী ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমেছে। চালের ঘাটতি কমাতে দেশটিতে বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করেছে। অথচ ২০২০ সালে দেশটিতে মাত্র ১৪ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হয়েছিল। দেশটির সরকার খাদ্য সংকট মেটাতে ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতীয় ঋণ সহায়তা কর্মসূচির অধীন স্টেট ট্রেডিং করপোরেশনে তহবিল বরাদ্দ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব উদিত জয়াসিংহে একটি আনুষ্ঠানিক রেশনিং প্রকল্পের আহ্বান জানিয়েছিলেন, যাতে বয়স্ক ও অসুস্থদের সামনের মাসগুলোয় খাওয়ানো যায়। তবে সে প্রকল্প বাতিল করেছে সরকার।