মধু মাসের সুস্বাদু ফলের অন্যতম লিচু। গত কয়েক বছরের তুলনায় ঝড়বৃষ্টির কারণে চুয়াডাঙ্গার লিচুর ফলন এবার কম হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ লিচু উৎপাদন হয়েছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা। ফলন কম হলেও দাম ভালো পাওয়ায় খুশি চাষিরা। চুয়াডাঙ্গার লিচু ব্যবসায়ীরা বলছেন, জেলার লিচু সব সময় আগের বাজারে আসে এবং বৈশাখ মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। বাজারে অন্য লিচু না থাকার কারণে এ সময় চুয়াডাঙ্গার লিচু চড়া মূল্যে বিক্রয় হয়। জানা যায়, এ বছর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে প্রলয়ংকরী ১৫-২০ মিনিটের ঝড়, শিলাবৃষ্টি বয়ে যায়। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ ঝড়ে প্রায় চুয়াডাঙ্গায় ১৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হয় । চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস ও কৃষি অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, ভুট্টা আবাদের ৪৪ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমির মধ্যে ক্ষতি হয় ১৩ হাজার ২৫৩ হেক্টর জমির ভুট্টাক্ষেত। গম ৯৯৫ হেক্টরের মধ্যে ক্ষতি হয় ৫৫ হেক্টর, বোরোধান ৩৬ হেক্টরের মধ্যে ১ হাজার ৪৭০ হেক্টর, কলা ১ হাজার ৫২৬ হেক্টরের ১৫৩ হেক্টর, পেঁপে ৫২০ হেক্টরের মধ্যে ৯৫ হেক্টর, পেঁয়াজ ১ হাজার ৬১৫ হেক্টরের মধ্যে ৩৫ হেক্টর, মসুর ৯১৭ হেক্টরের মধ্যে ২৩৪ হেক্টর, রসুন ২৬৬ হেক্টরের মধ্যে ২০ হেক্টর এবং লিচু ২৫৫ হেক্টর জমির মধ্যে ২০ হেক্টর ক্ষতি হয়েছে। জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের লিচুচাষি আবু তালেব জানান, ২০০০ সালে স্থানীয় নার্সারি থেকে চারা নিয়ে কৃষি বিভাগের পরামর্শে দেড় বিঘা জমিতে লিচুর গাছ লাগিয়েছিলাম। দুই বছর পর থেকে ফল ধরা শুরু হয়। চলতি বছর আবহাওয়াজনিত কারণে ফল একটু কম আসে। তারপরও ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় পাইকারীদের কাছে লিচুসহ বাগান বিকিকিনি করি। গত বছর ২ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বাগান পাইকারীদের কাছে বিক্রয় করে দিয়েছিলাম। একই উপজেলার লিচুচাষি সেলিম মিয়া বলেন, নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করে ১৯৮৫ সালে বোম্বায় ও আঁটির ২৭টি চারা শখের বশে রোপণ করি। চলতি বছর ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় ব্যবসায়ীদের কাছে লিচু বিকিকিনি করেছি। দামুড়হুদা উপজেলার লিচুচাষি বিল্লাল হোসেন জানান, তার তিন বিঘা জমিতে ৩৯টি লিচুগাছ আছে। অন্য বছর পাইকারদের কাছে বিক্রয় করি। চলতি বছর নিজেদের খাওয়া ও মেহমানদারী বাদেও প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার লিচু বিক্রয় করেছি। লেবার, ঝুড়ি ও যাতায়াতসহ প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি বলেন, লিচু দীর্ঘদিনের ফসল। এ বাগান থেকে প্রায় ৩৬ বছর লিচু বিকিকিনি করছি। এ বাগান থেকে এখনও অনেকদিন লিচু বিক্রয় করতে পারব বলে আশা রাখি। কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গায় এ বছর ২৫৫ হেক্টর জমিতে লিচু হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৬৮ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৭৪ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৬৮ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৪৫ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় এ বছর ২৫৫ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। যা থেকে লিচুর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২.৩ মেট্টিকটন। তিনি জানান, ফেব্রæয়ারির শেষ দিকে শীলাবৃষ্টিতে ২০ হেক্টর জমিতে লিচুর ক্ষতি সত্তে¡ও শতভাগ অ্যাচিভমেন্ট হয়েছে এ জেলায়। তিনি জানান, লিচুচাষিরা বাজারজাত করার আগে কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ করে বিষমুক্ত পরিপক্ব লিচু বাজারে আনবে এমনটি প্রত্যাশা লিচুপ্রেমীদের। তিনি বলেন, লিচু উৎপাদনের ক্ষেত্রে চাষিদের যাবতীয় পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়া হয়। সরকারি ও বেসরকারিভাবে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে লিচুর আবাদ আরও বাড়ানো এবং সেই সঙ্গে বিক্রির সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে পাল্টে যেতে পারে স্থানীয় অর্থনীতির চিত্র।