দীর্ঘ ১১ মাস পর আমাদের মাঝে আবার হাজির হয়েছে ইবাদতের বসন্ত রমজানুল মোবারক। এটি প্রতিটি মুমিনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাস। জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাস। যারা এই মাসেও তার গুনাহ মাফ করাতে সক্ষম হয় না রাসুল (সা.) তাদের অভিসম্পাত করেছেন। (বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান : ১৬৬৮)
এটি সংযমের মাস। আত্মশুদ্ধি অর্জন ও কুপ্রবৃত্তি দমনের মাস। এ মাসে প্রতিদিন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা ফরজ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে জাগতিক সব বিষয়ে সংযত জীবনাচারের। নির্দেশনা আছে সব ধরনের পাপ ও অন্যায় অপকর্ম থেকে দূরে থাকার। রমজান মাসে কথায় ও কাজে মিতচারী হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যদি কেউ পবিত্র মাহে রমজানে মহান আল্লাহর এই নির্দেশনা মেনে চলতে পারে, তবে মহান আল্লাহ এর পুরস্কার তাকে নিজ হাতে দেবেন। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর সাওম (রোজা) পালনকারীর (ক্ষুধাজনিত কারণে নির্গত) মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ তাআলার কাছে কস্তুরির সুগন্ধি থেকেও অধিক পছন্দনীয়।’ (নাসায়ি, হাদিস : ২২১৫)
অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যতক্ষণ না ইফতার করে এবং মজলুমের দোয়া। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৫২)
উপরোক্ত হাদিস দ্বারা বোঝা যায় যে ইফতারের আগে রোজাদারের দোয়া কবুল হয়। তাই রমজানের পরিপূর্ণ বরকত অর্জনের জন্য রোজাদারদের ইফতারের ব্যবস্থা করাও একটি বড় পদ্ধতি হতে পারে। এতে খুব সহজে তাদের নেক দোয়া পাওয়া যাবে। তা ছাড়া রোজাদারকে ইফতার করানো অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সে ওই রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। এবং রোজাদারের সওয়াবও কমানো হবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ৮০৭)
সুবহানাল্লাহ! মাহে রমজানে মহান আল্লাহ এভাবে তাঁর বান্দাদের অগণিত সওয়াব অর্জনের সুযোগ করে দেন। করোনার প্রাদুর্ভাবে গত বছরের মতো এই বছরও গোটা দেশে কঠোর লকডাউন চলছে। ফলে বহু মানুষ বেকার। থেমে গেছে অর্থনীতির চাকা। ফলে লাখ লাখ মানুষ অভাবের তাড়নায় নিদারুণ কষ্ট করছে। আবার এমন অনেক মানুষ আছে, যারা বিভিন্ন জরুরি সেবা দিতে গিয়ে রাস্তায়ই ইফতার করতে হয়। অনেকের ইফতার করার ভালো কোনো ব্যবস্থাও থাকে না। মুমিনের উচিত সাধ্যানুযায়ী সেই মানুষদের ইফতারের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা। এ ছাড়া অসচ্ছল প্রতিবেশীর খোঁজ রাখাও মুমিনের কর্তব্য। এর বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত সওয়াব। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিঃস্বার্থভাবে ক্ষুধার্ত মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করে, মহান আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলরা পান করবে এমন পানপাত্র থেকে, যার মিশ্রণ হবে কর্ফূর। এমন এক ঝরনা, যা থেকে আল্লাহর বান্দারা পান করবে, তারা এটিকে যথা ইচ্ছা প্রবাহিত করবে। তারা মানত পূর্ণ করে এবং সে দিনকে ভয় করে, যার অকল্যাণ হবে সুবিস্তৃত। তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকিন, এতিম ও বন্দিকে খাদ্য দান করে। তারা বলে, ‘আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের খাদ্য দান করি। আমরা তোমাদের থেকে কোনো প্রতিদান চাই না এবং কোনো শোকরও না। আমরা আমাদের রবের পক্ষ থেকে এক ভয়ংকর ভীতিপ্রদ দিবসের ভয় করি। সুতরাং সেই দিবসের অকল্যাণ থেকে আল্লাহ তাদের রক্ষা করলেন এবং তাদের প্রদান করলেন উজ্জ্বলতা ও উত্ফুল্লতা।’ (সুরা দাহর, আয়াত : ৫-১১)
তাই আসুন, পবিত্র রমজানে আমরা সবাই ব্যয় ও খাবারেও সংযত হয়ে আমাদের আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের পাশে দাঁড়াই, হয়তো মহান আল্লাহ এর অসিলায় আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দেবেন।