বাংলাদেশের নারীদের সবচেয়ে প্রিয় পোশাক কি? এই প্রশ্ন করা হলে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি ৯৯% নারীই জানাবেন শাড়ি। যেকোনো অনুষ্ঠানে নারীরা নিজেদের অপুরূপ সাজে সাজান শাড়িতে। নারী আর শাড়ি যেন সমার্থক আমাদের ভাষায়। পছন্দের শাড়ির ভেতর জামদানির স্থানটা থাকে যেন সবচেয়ে উপরে। এমন কোনো নারী পাওয়া ভার যাদের আলমারিতে একটি শখের জামদানি নেই। জামদানির উপর আকর্ষণ স্বাভাবিকভাবেই বেশি থাকে তার অপূর্ব কারুকাজ সমন্বিত নকশা ও বৈচিত্রের জন্য। মিহি সুতার বুননে তৈরি এক একটি শাড়ি যেন হাজারো গল্পের জন্ম দেয়।
তবে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হল, জামদানি শাড়ি খুব সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। অন্যান্য ঘরানার শাড়ির চাইতে জামদানি শাড়ির বুননে পার্থক্য থাকায় বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয় জামদানির শাড়ির রক্ষণাবেক্ষণে। কিছুটা বাড়তি যত্নে দীর্ঘদিন ভালো থাকতে পারে আপনার শখের শাড়িটি।
✪ আমি আমার আলমারিতে সব সময়ই শুকনো নীমপাতা আর সিলিকা রাখি। এটা দারুন কাজে দেয়। এগুলো কিন্তু খুব সহজলভ্য। যেকোন ওষুধের বোতলের মাঝে, নতুন কেনা ব্যাগ বা জুতোর ভেতরে সিলিকার প্যাকেট থাকেই। ফেলে না দিয়ে এটা রেখে দিন আপনার কাপড়ের আলমারিতে। এর কাজ হচ্ছে বাতাসের আদ্রতা শোষণ করে নেয় এবং আপনার পোশাককে শুষ্ক রাখে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে, কোনো স্যাঁতসেঁতে ভাব হয় না, দুর্গন্ধ হয় না। নীমপাতা রাখলে বিভিন্ন পোকামাকড় আপনার পোশাককে কেটে দিতে পারবে না।
✪ সাধারণভাবে পানিতে জামদানি ধোবেনই না এমনকি জামদানি শাড়ি ভুলেও ড্রাইওয়াশ করা যাবে না। জামদানি শাড়ি করতে হয় কাটা ওয়াশ। এক বিশেষ পদ্ধতিতে এটা তাঁতিরা করেন। এতে শাড়ি ভালো থাকে, রং ও নষ্ট হয় না। ড্রাই ওয়াশে শাড়ির রং জ্বলে যেতে পারে। সুতাও ডিসপ্লেসড হতে পারে।
✪ এই শাড়িতে পাড়ে ফলস লাগালে অনেকদিন ভালো থাকে। না হলে পায়ে জড়িয়ে শখের জামদানি ছিঁড়ে যেতে পারে। আমার ধারনা যদি কিছুটা সাবধানে শাড়ি পরা যায় তবেই শাড়ি অনেকদিন ভালো থাকে। এমনভাবে শাড়ি পরবেন না যাতে শাড়িতে সরাসরি আপনার জুতার স্পর্শ লাগে। আর শাড়ি পরেও কিছুটা সচেতন থাকবেন যাতে পানি এবং ধুলা না লাগে।
✪ জামদানির ভাজ সাধারণ শাড়ির মতো করবেন না। আপনি যখন জামদানি কেনেন সেই শাড়ির ভাজ লক্ষ্য করুন, জামদানি ওভাবেই ভাজ করতে হয়। তবে আপনি অতো ভাজ না করে প্রথমে আড়াআড়ি, পরে লম্বালম্বি এই ভাজ দিয়ে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন।
✪ জামদানি শাড়ি যাতে ফেঁসে না যায় সেজন্য অনেকে রোল করে রাখেন। বাসায় কিভাবে এমনভাবে রোল করে রাখা যায় যাতে শাড়িতে একটিও ভাজ দিতে না হয় সেটা একটি কৌশলের ব্যাপার। কারণ ভাজ মানেই সেই ভাজের অংশে ফেঁসে যেতে পারে শাড়ি।
✪ জামদানি বেশীদিন তুলে রাখলেই তার আয়ু কমে যায়। মাঝে মাঝেই পরুন শখের জামদানি। বাতাসে ভালোভাবে শুকিয়ে তুলে রাখুন। এতে করে শাড়িতে ভাজ বসবে না। শুধু শুধুই পরে ফেলুন শখের শাড়িটি।
✪ শাড়ি পরার পর সঙ্গে সঙ্গেই ভাজ করে বা রোল করে রাখবেন না। কোনোভাবেই যেন ঘাম না বসে। ঘাম আর পানি জামদানির বড় শত্রু।
✪ জামদানিতে কোনো দাগ লেগে গেলে, জামদানি ছিড়ে গেলে বা রং জ্বলে গেলে অন্য কিছু না করে একে কাটা ওয়াশে দেবেন। তাঁতিরা ইনশাআল্লাহ সেটা ঠিক করে দিতে পারবেন।
✪ শাড়ি যদি অনেক দিন না পরা হয় তখন নরম হয়ে যায়। সেক্ষেত্রেও সমাধান কাটা ওয়াশ। তাঁতিরা অনেক দক্ষতার সঙ্গে কাটা ওয়াশ করে থাকেন। বলা হয় জামদানিকে পুনর্জন্ম দেয় কাটা ওয়াশ।
✪ জামদানি শাড়ির ব্লাউজ শাড়ির চেয়েও স্পর্শকাতর হয়। যেহেতু একই কাপড় কেটে ব্লাউজ করা হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সঠিক উপায় হলো, ব্লাউজ কিছুটা লুজ বানানো, যাতে ফেঁসে না যায়। আর ব্লাউজের ফলসের কাপড়টা ভালো মানের দেয়া।
✪ ভালো লেগেছে তাই কিনে ফেলেছেন শাড়িটি, এখন পরবেন না, কিছুদিন পরে পরবেন। তাহলে কোনভাবেই ভাজ নষ্ট করবেন না। একটা পরিষ্কার খবরের কাগজে মুড়িয়ে তুলে রেখে দিন আলমারিতে।
এভাবে আপনার শখের জামদানি শাড়ির যত্ন নিতে পারেন। এতে অনেকদিন ব্যবহার করতে পারবেন এই শাড়ি। জামদানি শাড়ি দামের উপর না যত্নের উপরে ভালো থাকবে। তাই যত্নে রাখুন আপনার শখের শাড়িটি।