অনলাইন ডেস্ক:
দীর্ঘদিন পর সড়কপথে সব ধরনের ভিসা দিচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। দুই দেশেই করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় কিছু নিয়মেও এসেছে শিথিলতা। গত বুধবার (৩০ মার্চ) থেকে ভ্রমণসহ সব ধরনের ভিসা নিয়ে ভারতে ঢুকতে পারছেন বাংলাদেশিরা। তবে ব্যবহার করতে হচ্ছে শুধু বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দর। অন্য রুটগুলো এখনো চালু হয়নি। আকাশপথ চালু আছে আগের মতোই।
স্থলবন্দরগুলো দিয়ে যাত্রী পারাপারে ভারতীয় হাইকমিশনের ই-মেইল কনফারমেশন লাগবে না বলেও জানিয়েছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন সূত্র।
ভারতীয় ভিসা আবেদন সেন্টার সূত্র জানায়, যাদের ভারতে যাওয়ার জন্য ভ্রমণ ভিসায় শুধু বাই এয়ার (আকাশপথে ভ্রমণ) অনুমোদন ছিল, তারা সেই ভিসা কনভার্ট করে বাই রোডে ভারতে যেতে পারবেন। তাদের নির্দিষ্ট আবেদন ফরম পূরণ করে রুট যুক্ত করে নিতে হবে। যাদের পাঁচ বছর মেয়াদি ভ্রমণ বা অন্য ভিসা ছিল তারাও এখন ভারতে যেতে পারবেন। দীর্ঘ প্রায় দুই বছর পর সেই নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়েছে।
নতুন রুট যুক্ত করবেন যেভাবে
যেসব বাংলাদেশি নাগরিক আকাশপথে ভ্রমণের জন্য ভারতীয় ভিসার অনুমোদন পেয়েছেন, তারা নির্ধারিত ফি দিয়ে ওই ভিসার পরিবর্তে সড়কপথে ভ্রমণের অনুমোদন নিতে পারবেন। একইসঙ্গে আকাশপথের পাশাপাশি সড়কপথেও ভ্রমণের অনুমোদন সংযোজন করাতে পারবেন। এজন্য তাদের ঢাকার ভারতীয় কমিশনের ওয়েবসাইটে ঢুকে একটি ফরম ডাউনলোড করে প্রিন্ট দিয়ে পূরণ করে ভিসা সেন্টারে জমা দিতে হবে। একজন ব্যক্তি দুটি রুট একসঙ্গে সংযোজনের আবেদন করতে পারেন। এই মুহূর্তে শুধু বেনাপোল ও আখাউড়া যুক্ত করা যাচ্ছে। ভিসা সেন্টারের ভিতরে এজন্য ৩০০ টাকা ফি, পাসপোর্ট জমা দিতে হবে। পাঁচ থেকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে আপনি পাসপোর্ট ফেরত পাবেন। যে কোনো রুট দিয়ে বৈধ ভিসা থাকলেই তিনি রুট সংযোজন করতে পারবেন।
শিগগির চালু হবে রেলপথ
আকাশপথের পর সীমিত পরিসরে স্থলপথে ভারত ভ্রমণ চালু হলেও রেলপথ এখনো বন্ধ। সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী জানিয়েছেন, শিগগির গেদে ও জলপাইগুড়ির সঙ্গে রেল যোগাযোগও চালু হবে। এটা চালু হলে ঢাকা থেকে রেলে সরাসরি কলকাতা ও শিলিগুড়ি-দার্জিলিং যাওয়া যাবে।
করোনা নিষেধাজ্ঞা
দুই ডোজ টিকা নেওয়া থাকলে ভারতে ঢুকতে এখন আরটিপিসিআর টেস্ট দরকার হচ্ছে না। তবে করোনা সনদ দেখাতে হবে। কোয়ারেন্টিনেরও প্রয়োজন নেই। একইভাবে ওপার থেকে দেশে ঢুকতেও একই নিয়ম মানা হচ্ছে। তবে যারা আকাশপথে যাবেন তাদের এয়ার সুবিধা অ্যাপে নির্দিষ্ট তথ্য পূরণ করতে হবে যাত্রার আগে।
করোনায় স্থগিত হওয়া ভিসায় যেতে পারবেন কি না
করোনার কারণে স্থগিত হওয়া ভিসায় অবশ্যই এখন যেতে পারবেন। তবে যাদের ভিসার মেয়াদ এখনো আছে। যদি এমন হয়, কারও ভিসার মেয়াদ অক্টোবর ২০২১ পর্যন্ত ছিল অথচ নিষেধাজ্ঞার কারণে যেতে পারেননি, তিনি কিন্তু যেতে পারবেন না। যাদের মূলত পাঁচ বছরের ভিসা আছে এবং ভিসার মেয়াদ এখনো আছে শুধু তারাই যেতে পারবেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন সূত্র।
ভ্রমণ ভিসার জন্য যেসব কাগজপত্র লাগবে
ভ্রমণ ভিসার জন্য পাসপোর্টের মেয়াদ থাকতে হবে ন্যূনতম ছয় মাস। ভারতীয় ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের ওয়েবসাইটে ঢুকে ফরম পূরণ করতে হবে। পূরণের পর ফরমটি সাতদিনের মধ্যে জমা দিতে হবে।
ফরমসহ কাগজপত্র সাজানোর ক্রম
১. আবেদন ফরম (ফরমের ডান কোনায় ২ ইঞ্চি/২ ইঞ্চি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের সদ্য তোলা ছবি আঠা দিয়ে জোড়া লাগাতে হবে)। ছবির নিচে ও দ্বিতীয় পৃষ্ঠার নিচে পাসপোর্ট অনুযায়ী স্বাক্ষর করতে হবে।
২. জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধনের কপি
৩. বর্তমান ঠিকানার বিদ্যুৎ/পানি/গ্যাসের বিলের ফটোকপি
৪. ব্যাংক স্টেটমেন্ট/ডলার স্টেটমেন্ট
৫. পেশাগত প্রমাণপত্র (এনওসি)
৬. আইডি কার্ডের ফটোকপি
৭. পাসপোর্টের ইনফরমেশন পেজের ফটোকপি
ফরম ভাঁজ করা ও স্ট্যাপলার না করা ভালো। ফরমা জমা দেওয়ার আগে ৮শ টাকা ফি জমা দিতে হবে। অন্য চার্জসহ যা ৮৫০ টাকা পড়ে। ভিসা সেন্টারের আশপাশে ফি জমা দেওয়ার দোকান পাবেন।
ভ্রমণ ভিসায় সিকিম, অরুণাচলসহ কিছু এলাকায় যেতে বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। অনুমতি বিষয়ে জানতে ক্লিক করুন এখানে।
মেডিকেল ভিসা
প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে কয়েক লাখ মানুষ শুধু চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। এমননকি করোনার বাড়বাড়ন্ত সময়েও বিশেষ ব্যবস্থায় চালু ছিল এই ভিসা।
ভারতে মেডিকেল ভিসা পেতে যা করবেন
ট্যুরিস্ট ভিসায় সাধারণত নরমাল চিকিৎসা যেমন ডাক্তার দেখানো বা কিছু টেস্ট ইত্যাদি করানো যায়। তবে বড় ধরনের চিকিৎসা যেমন অপারেশন লাগলে মেডিকেল ভিসা আবশ্যক।
ভারতীয় মেডিকেল ভিসার আবেদনের প্রক্রিয়া সব প্রায় ট্যুরিস্ট ভিসা আবেদনের মতোই, তবে দুটো কাগজ অতিরিক্ত লাগে। সাধারণত রোগীর সঙ্গে এক বা একাধিক সঙ্গী যান। যাদের ‘মেডিকেল অ্যাটেন্ডেন্ট’ বলা হয়। এদের সবারই ভিসা লাগবে। রোগীর ভিসা হবে ‘মেডিকেল ভিসা’ Visa Type: MED আর অ্যাটেন্ডেন্টদের ভিসা হবে ‘মেডিকেল অ্যাটেন্ডেন্ট’ Visa Type: MEDx.
সবারই ভিসা আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে অ্যাটেন্ডেন্ট যে কেউ ভিসা আবেদন জমা দিতে পারবে। রোগীর নিজে গিয়ে জমা দিতে হবে না।
মেডিকেল ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
১.পাসপোর্ট
২. এক কপি ২x২ ইঞ্চি মাপের প্রিন্টেড সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের ছবি ও আরেকটি সফট কপি (শুধু অনলাইন আবেদনের সময় লাগবে)
৩. পূরণ করা ফরম (প্রিন্টেড)
৪. স্মার্টকার্ড/এনআইডি অথবা জন্ম সনদের ফটোকপি
৫. ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বা টেলিফোন বিল)
৬. পেশার প্রমাণপত্র (বেসরকারি চাকরিজীবী হলে এনওসি, সরকারি চাকরিজীবী হলে এনওসি-জিও, ছাত্র হলে আইডি কার্ড, ব্যাবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি, আর পেশা কৃষি হলে জমির খতিয়ানের ফটোকপি)
৭. ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ডলার এনডোর্সমেন্ট অথবা ইন্টারন্যাশনাল কার্ডের কপি
৮. পাসপোর্টের ডাটা পেজের ফটোকপি (ছবির পাতা)
৯. সবশেষ ইন্ডিয়ান ভিসার ফটোকপি (যদি থাকে)
১০. অন্য কোনো সাপোর্টিং কাগজ যদি দিতে চান।
১১. আগের সব পাসপোর্ট। যদি পুরাতন পাসপোর্ট থাকে তাহলে অবশ্যই দিতে হবে। আর হারিয়ে গেলে জিডি কপি ও লস্ট সার্টিফিকেট দিতে হবে।
১২. সুনির্দিষ্ট তারিখসহ ভারতীয় ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার,
সাম্প্রতিককালের সব প্রেসক্রিপশন ও রিপোর্টের ফটোকপি এবং মেইন কপি (মেইন কপি ফেরত দেবে)
আপনি কোন হাসপাতালে কোন ডাক্তার দেখাতে চান সেগুলা জানা থাকলে নিজেই অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারেন।
ভ্রমণ ও মেডিকেল ভিসায় সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি ভারতে যান। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই দুটি ভিসার জন্য যা জরুরি সেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
মহামারি করোনাকালীন প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত ১৫ নভেম্বর থেকে ভারতের ভ্রমণ ভিসা চালু হয়। যদিও তখন তা ছিল শুধু আকাশপথে। তবে এখন থেকে স্থলপথেও ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশিরা ভারতে যেতে পারবেন।