বাংলাদেশে করোনা মহামারি যেতে না যেতেই আবার ফিরে এসেছে চিরচেনা যানজট। গত সপ্তাহেই যানজটে অচল হয়ে পড়েছিলো ঢাকা শহর। আর সপ্তাহের শেষ দিন সরকারি ছুটির সুবাদে পরপর তিনদিনের ছুটি পেয়ে বহু মানুষ ঢাকা ছেড়েছিলেন। কিন্তু ঢাকার যানজট বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ততক্ষণে অচল করে ফেলেছিলো জাতীয় মহাসড়কগুলোকে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গ ও টাঙ্গাইল যাওয়ার সড়কগুলোতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিলো অনেকের ভ্রমণ। একজন শিক্ষার্থী বলছিলেন, সকালে রওনা দিয়ে জ্যামের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় আটকে ছিলেন তারা।
“সময় নষ্ট হয়েছে, অসুস্থও হয়ে পড়েছি। রাস্তায় খাবারের দামও বেশি হাকাচ্ছিলো দোকানিরা। ফলে খরচটাও বেড়ে গেলো।”
আরেকজন যাত্রী বলছেন, তার ধারণা ছিলো ঢাকার যানজট পেরিয়ে মহাসড়কে উঠতে পারলেই ছুটিটা চমৎকার কাটানোর জন্য গন্তব্যে যেতে পারবেন তিনি। কিন্তু তা হয়নি। আবার তিনদিনের ছুটির পর রোববার থেকে খুলবে অফিস-আদালতসহ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান, এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে বেড়াতে শহর ছেড়ে যাওয়া অসংখ্য মানুষ ইতোমধ্যেই ফিরতে শুরু করেছেন। আর এই ঢাকা-মুখী ঢলের কারণেও মহাসড়কে আবার যানজটের আশংকা করা হচ্ছে। অথচ গত কয়েক বছর ধরেই মহাসড়কগুলো প্রশস্ত করার কাজ চলছে। সব মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করণের নীতিগত ঘোষণা এসেছে অনেক আগেই। চার লেনে উন্নীত হয়েছে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক, প্রশস্ত হয়েছে ঢাকা ময়মনসিংহ সড়ক। মহাসড়কে যানজট হতো এমন বেশ কিছু জায়গায় ফ্লাইওভার ও ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও মহাসড়ক যানজট মুক্ত হচ্ছেনা। বরং কখনো কখনো যানজটের দৈর্ঘ্য ৩০/৪০ কিলোমিটার হয়ে যাচ্ছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলছেন, মহাসড়কে যানজটের প্রকৃত কারণ নিয়ে গবেষণা না করে ঢাকায় বসে সমাধান দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেই সংকটের সমাধান হচ্ছে না। অথচ মহাসড়ক যানজট মুক্ত করতে বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা চলছে। এমনকি আইনও করা হয়েছে যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে। তবে বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ হাদিউজ্জমান বলছেন, মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনা, মহাসড়কের সাথে গ্রামীণ সড়কের যত্রতত্র সংযোগের কারণেই মহাসড়ক যানজট মুক্ত হচ্ছে না। সড়ক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা -রংপুর মহাসড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, ঢাকা বাইপাস এক্সপ্রেসওয়েসহ চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে মহাসড়কে আর যানজট থাকবে না। কিন্তু এগুলো কবে শেষ হবে তা নিয়ে উদ্বেগ আছে। কারণ বাংলাদেশে কোন প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ করার নজির বিরল, বা নেই বললেই চলে।