প্রাথমিক শিক্ষায় একটি নতুন শিক্ষা পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছি। কোভিড পরিস্থিতিতে শিক্ষা খাতে যে ঘাটতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। যেটি সরাসরি এবং ভার্চুয়ালি শিক্ষার্থীদের কাছে পৌছে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা খেলার ছলে শিখতে পারবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অভিজ্ঞ করে তোলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহমেদ। বুধবার (৩০ নভেম্বর) মিরপুরের পিটিআই ভবনে আয়োজিত কোভিড-১৯ স্কুল সেক্টর রেসপন্স (সিএসএসআর) প্রকল্পে শিখন ঘাটতি পুরণে প্রিন্টিং বইয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সচিব এসব কথা বলেন।
সচিব ফরিদ আহমেদ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী যে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছিলো, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়ও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়। সংশ্লিষ্ট সকলের প্রচেষ্টায় শিক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখার চেষ্টা চালানো হয়। এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনলাইনে শিক্ষকদের পাঠদানে অভিজ্ঞতা তৈরি হয়েছে। অভিজ্ঞ শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণে নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। নতুনভাবে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আরো পারদর্শী করে তোলা হয়েছে। তিনি বলেন, সিএসএসআর প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা ভার্চুয়াল কনটেন্ট ও প্রিন্টেড সহায়ক বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে। প্রথমে সুবিধা বঞ্চিত এলাকার (হাওড়, বাওড় ও উপকূলীয় অঞ্চল) দেড় লাখ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এসব বইয়ের মধ্যে বিভিন্ন খেলা ও আনন্দদায়ক করা হয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা খেলার ছলে শিখতে পারবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তেমনভাবে তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে করোনায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা তাদের ঘাটতি পুরণ করতে পারবে। তিনি বলেন, প্রতি ১০০ বছরে করোনার মতো ভয়াবহ দুর্যোগ দেখা দেয়। এসকল দুর্যোগ ভয়াবহতার পাশাপাশি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। এবার করোনার মধ্য দিয়ে আমরা অনলাইনে পাঠদানে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। শিক্ষকদের এমন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে যেন পরবর্তীতে যে কোন বিপর্যকে মোকাবেলা করে পাঠদান অব্যাহত রাখতে সক্ষম হন। আমাদের সহায়ক পাঠ্যবইগুলো সেভাবে তৈরি করা হচ্ছে। ২০২৩ সাল থেকে প্রাক-প্রাথমিক দুই বছর করা হবে জানিয়ে সচিব বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর বইয়ের বোঝা থাকবে না। আনন্দের সঙ্গে শিখণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে প্রাক প্রাথমিক স্তরকে সমন্বয় করতে এই প্রকল্পের কনটেন্টগুলো সহায়ক হবে। বাচ্চারা স্কুলে এসে খেলার ছলে শিখবে। সেই আলোকেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি কেইকো ইনোই বলেন, এশিয়ার অনেক দেশের চাইতে শিক্ষা খাতে বাংলাদেশে অধিক পরিমাণ অর্থায়ন করেছে বিশ্ব ব্যাংক, যার পরিমান ১.৮ বিলিয়ন ডলার। কোভিড পরিস্থিতিতে ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশের প্রাথমিক স্তরের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা পুরণ হবে বলে আমি মনে করি। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, ইউনিসেফের প্রতিনিধি দীপা সংকর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) অধ্যাপক ড. প্রবীর কুমার, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পিইডিপি-৪) দীলিপ কুমার বণিক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রাজস্ব) সৈয়দ মামুনুল আলম, প্রকল্প পরিচালক ড. নুরুল আমিন। আলোচনা শেষে উপস্থিত শিক্ষার্থীর হাতে শিখন ঘাটতির বই তুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন।