বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কামরুল হাসান। বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে লেখা-পড়া করেছেন। কিন্তু জীবনের মোড় ঘুরে যায় হত্যাকাণ্ডের পরে। মামলায় তার নাম আসায় ভারতে আত্মগোপন করেন তিনি। তবে মামলার রিপোর্ট দেওয়ার পরে দেশে এসে জড়িয়ে পড়েন প্রশ্ন পাঁস চক্রের সঙ্গে। এখান থেকে বেশ টাকাও আয় করেন। কিন্তু করোনা মহামারি আবার বেকে বসে তার জীবনে। রবিবার রাতে রাজধানীর পল্টন থানাধীন চামেলীবাগ এলাকা থেকে কামরুল হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। কামরুল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর নারায়ণপুরের মৃত আব্দুল কাইয়ুমের ছেলে। সোমবার বিকালে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানান। কামরুল হাসান প্রশ্ন ফাঁসের করে উপার্জন দিয়ে তিনি কক্সবাজার সদর এলাকায় হোটেল ব্যবসা চালু করেন। করোনা মহামারির লকডাউনের সময় লোকসানের কারণে ব্যবসা বন্ধ করে দেন। বর্তমানে তার দৃশ্যমান কোনো পেশা নেই। এতো দিন পরিচয় গোপন করেই এসব করে আসছেন বলে জানায় র্যাব। আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, কামরুল ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের নামে নিয়োগ পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে প্রশ্ন বিক্রি করে দশ লাখের বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন জানান, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার কামরুল জানিয়েছে ঘটনার দিন বিশ্বজিৎকে প্রতিপক্ষ দলের সদস্য ভেবে তাকে তারা ধাওয়া করে। এসময় তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। বিশ্বজিৎ আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তারপর সে জানতে পারে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে বিশ্বজিৎ এর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় মামলা হয়েছে। এরপর পার্শ্ববর্তী দেশে তার নানার বাড়ির আত্মীয়ের আশ্রয়ে আত্মগোপন করেন কামরুল। পরে মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের দুমাস পর দেশে ফিরে আসেন। তিনি জানান, ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সূত্রাপুর এলাকায় সরকারবিরোধী আইনজীবীদের এক মিছিলে তাড়া করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুল ইসলাম কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ওই সময় তারা পথচারী লন্ড্রী ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাসকে সামনে পেয়ে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় ওই দিনই সূত্রাপুর থানায় মামলা হয়। স্পর্শকাতর হওয়ায় মামলাটি পরে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। পুলিশ ২১ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন। ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক এ বি এম নিজামুল হক এ মামলায় রায় দেন। রায়ে ২১ আসামির মধ্যে আটজনের মৃত্যুদণ্ড ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ওই দিন এ মামলার আট আসামি আদালতে হাজির ছিলেন। বাকি আসামিরা পলাতক ছিলেন।আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কামরুলকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।