দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ফের বাংলাদেশ-ভারত রেল যোগাযোগ। পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন বুধবার সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে, যেটি উত্তরবঙ্গের নীলফামারি জেলার চিলাহাটি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। মিতালী এক্সপ্রেস নামের এই ট্রেনটির মাধ্যমে বহু বছর পর এই রুটে ভারত ও বাংলাদেশের ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হল। বুধবার সকালে দিল্লিতে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের ভার্চুয়াল ফ্ল্যাগ অফের পর নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছাড়ে। ঢাকায় এটির পৌঁছানোর কথা রাত দশটায়। এর আগে করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ঢাকা-কোলকাতা রুটের বন্ধন এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটিও গত ২৯শে মে পুনরায় যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করে। রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদার জানিয়েছেন যে, মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি সপ্তাহে দু দিন উভয় প্রান্ত থেকে চলাচল করবে, মোট চারটি ট্রিপ থাকবে। বাংলাদেশ থেকে রওনা হওয়া যাত্রীদের ঢাকায় ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে আর ভারত থেকে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে যাত্রীদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হবে। দিল্লিতে ট্রেনটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। রেলওয়ে থেকে আগেই একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছিলো যে মিতালী এক্সপ্রেস চালু হলে সপ্তাহে চার দিন এটি চলাচল করবে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে রবি ও বুধবার আর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে সোম ও বৃহস্পতিবার ছেড়ে যাবে ট্রেনটি। পথে হলদিবাড়ি ও চিলহাটি স্টেশনে ট্রেনটি থামার কথা রয়েছে। নির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী নিউজলপাইগুড়ি থেকে বেলা পৌনে বারোটায় ছেড়ে এসে ঢাকায় পৌঁছাবে রাত সাড়ে দশটায়। অন্যদিকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাত সাড়ে নয়টায় ছেড়ে জলপাইগুড়ি পৌঁছাবে সকাল সোয়া সাতটায়।
খরচ কেমন হবে, টিকেট কোথায় যাওয়া যাবে রেল কর্তৃপক্ষের সূত্র জানায়, ক্যান্টনমেন্ট থেকে নিউজলপাইগুড়ি স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনটির সর্বোচ্চ ভাড়া হবে ৫২৫৫ টাকা। এটি এসি বার্থের টিকেটের মূল্য। তবে যারা এসি সিটে যাবেন তাদের টিকেটের জন্য জনপ্রতি ৩৪২০ টাকা দিতে হবে। আর এসি চেয়ারে যারা যাবেন তাদের ২৭৮০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। এ ভাড়ার মধ্যেই ভ্রমণ কর অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে যাত্রীদের আর নতুন করে কোন ভ্রমণ কর দিতে হবে না। আর পাঁচ বছর বয়সের কম যাত্রীদের ভাড়া হবে টিকেট মূল্যের অর্ধেক। একজন প্রাপ্তবয়স্ক যাত্রী সর্বোচ্চ ৩৫ কেজি পর্যন্ত ওজনের মালামাল বিনামূল্যে বহন করতে পারবেন। রেলওয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন আর কলকাতায় টার্মিনাল স্টেশন ও ফেয়ারলিপ্লেস রেলওয়ে বিল্ডিং থেকে মিতালী এক্সপ্রেসের টিকেট পাওয়া যাবে।যেসব এলাকায় ভ্রমণে সুবিধা হবে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু হলে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং এবং সিকিমে যাওয়া বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য আরও সহজ হবে। আবার সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের মানুষদেরও বাংলাদেশে যেতে সুবিধা হবে। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ জলপাইগুড়ি হয়ে দার্জিলিং ভ্রমণ করে। ট্রেনটি চালুর পর দার্জিলিং ভ্রমণ আরও স্বাচ্ছন্দ্যের ও কম খরচের হবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা, কারণ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিংয়ের দূরত্ব খুবই কম। তবে ভারতের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসাকেন্দ্র না থাকায় পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলীয় অথবা সিকিমের মানুষের জন্য এই ট্রেনসেবা কতটা কাজে লাগবে তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ কলকাতায় গিয়ে ভিসা করিয়ে কেউ আবার জলপাইগুড়ি এসে ট্রেন ভ্রমণ করে বাংলাদেশে আসবেন না। ঢাকায় রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন এসব বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।