কৃষি উৎপাদনের অন্যতম হাতিয়ার ডিজেলের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় চুয়াডাঙ্গার কৃষকরা। এমনিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ভরাবর্ষ মৌসুমেও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সেচের মাধ্যমে আমন ধান রোপণ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে শুক্রবার রাতে ডিজেল-কেরোসিনের দাম এক লাফে প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলে আসন্ন মৌসুমে ফসল উৎপাদন নিয়ে মহাসংকেট পড়েছে কৃষকরা। বিশেষ করে বর্গাচাষিরা। দেশের দুঃসময়ে শেষ ভরসা ছিল কৃষি। করোনার ছোবলে দেশ যখন থমকে ছিল, তখনও কৃষির চাকা ছিল সচল। নির্ভরতার সেই কৃষি খাত এখন বড় সংকটে। ২০২১ সালে বাড়ানো হয় সারের দাম। একই বছরের নভেম্বরে ডিজেল-কেরোসিনের দাম বৃদ্ধির ধাক্কায় দুর্ভোগে পড়েন কৃষক। এরপর গত সপ্তাহে বাড়ানো হয় সারের দাম। এবার ডিজেল-কেরোসিনের নজিরবিহীন মূল্যবৃদ্ধিতে কৃষকদের মাঝে হাহাকার বিরাজ করছে। এ অবস্থায় কৃষকদের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন কৃষক ও চিন্তাশীল মানুষ। চুয়াডাঙ্গার পৌর এলাকার হাজরাহাটি গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, কৃষক আর বাঁচবে না। আগে এক বিঘা জমিতে শ্যালো মেশিনে খরচ বাবদ তিন হাজার টাকা দিতাম, ডিজেল আমাদের। এখন শ্যালো মেশিন খরচ বাবদ দিতে হবে চার হাজার টাকা ও ডিজেল। ঘণ্টাপ্রতি বরজে পানি দিতে ৩০০ টাকা নিতো, এখন ৪০০ টাকা নেবে। জমিতে এক চাষ দিতে ইতঃপূর্বে রোটার নিতো ৩০০ টাকা, এখন নেবে ৪০০ টাকা, আঁকড়া নিতো ২০০ টাকা এখন নেবে ২৭০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। তিনি বলেন, কৃষিতে আর লাভ হবে না, সব লোকসান হবে। ধান ১৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেও লাভ হবে না। কৃষক মরে শেষ, কৃষক আর বাঁচবে না, গ্রামে হাহাকার চলছে। একই গ্রামের কৃষক আসাদুজ্জামান বলেন, যাদের নিজের শ্যালো আছে ঘণ্টায় তাদের ১ লিটার ডিজেলে ১ ঘণ্টা বা শ্যালোপ্রতি এক ঘণ্টা বিশ মিনিট চলবে। তিনি বলেন, রোটারে পাকানোর সময় সাড়ে তিনশ টাকা ও শুকনার সময় তিনশ টাকা নিতো। এখন আরও বেশি নেবে। তিনি বলেন, গাড়ির মালিকদের সমস্যা হবে না, বেশি সমস্যায় পড়বেন কৃষক। আউশ মৌসুমে এক দিন পরপর সেচ দেয়া লেগেছে। এ বছর পানি নেই, যার কারণে সেচ বেশি লেগেছে। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের কৃষি উদ্যোক্তা আব্দুল কাদের সোহান বলেন, কৃষিতে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হারে বেড়ে যাবে, কিন্তু দ্রব্যের মূল্য সে হারে বাড়বে না। তিনি বলেন, বর্গাচাষি ও মধ্যবিত্তরা কৃষি পেশা বাদ দিয়ে তারা তাদের পেশা পরিবর্তন করবেন। অনেকে বেকার হয়ে পড়বেন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামের কৃষক রাজু আহম্মেদ বলেন, ২০০৮ সালে ৪৬ টাকায় ডিজেল কিনতাম। এখন ১১৪ টাকায় ডিজেল কিনতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান কেবিনেটে যারা আছেন তাদের মধ্যে কি কেউ কৃষক নেই? তিনি বলেন, ৩ মাসের ফসলে সেচ বাবদ ৯ হাজার টাকা ও ৬ মাসের ফসলে ১৪ হাজার টাকা খরচ হবে। এছাড়া লেবার, সার, কীটনাশক খরচ তো আছেই। এসব আমরা বুঝতে পারছি আর যারা সরকার পরিচালনা করছে তারা বোঝে না। তিনি আরও বলেন, কৃষিতে ভর্তুকি দেয়া হয়। এই ভর্তুকি আসলে কারা কারা পায়। এ ভর্তুকিতে কৃষক লাভবান হয় কি না? তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার বাবা একজন প্রতিবন্ধী কৃষক। আমরা কষ্ট করে চাষাবাদ করি। এ সরকারের আমলে আমরা ভর্তুকি পায়নি, তাহলে ভর্তুকি পায় কারা? এছাড়া জেলার দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলার একাধিক কৃষক ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে হতাশা প্রকাশ করেন। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, চুয়াডাঙ্গার (আলমডাঙ্গা ও সদর উপজেলার কিছু অংশ) জিকেখালের আওতায় বঙ্গ-কপোতাক্ষ সেচখালের অধীনে প্রায় সাড়ে আট হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা সেচ সুবিধা পেয়ে থাকে। এ এলাকায় সমস্যা কম হবে। তবে বাড়তি ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সমস্যা কিছুটা হবে। বাড়তি দামে ফসল বিক্রি করে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।