ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য জুমা ও রমজান ফজিলতপূর্ণ দিন ও মাস। বহুদিন ধরে প্রচলিত আছে, রমজান মাসের জুমার দিন মানুষের মৃত্যু সৌভাগ্যের। বাস্তবে কি এর সত্যতা আছে? থাকলে তা কী?
জুমার দিন মৃত্যু :
জুমা ও রমজানে মৃত্যুবরণকারী জন্য জান্নাত-জাহান্নামের কোনো সুসংবাদ না থাকলেও জুমার দিন মৃত্যুবরণকারী ঈমানদার মুসলমানকে কবরের ফেতনা থেকে মুক্ত রাখা কথা হাদিসের একটি বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়। হাদিসে পাকে এসেছে- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কোনো মুসলমান জুমার দিন কিংবা রাতে মৃত্যুবরণ করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের ফেতনা থেকে নিরাপদ রাখেন।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, বাইহাকি, মিশকাত) হাদিসটির ব্যাখ্যায় এসেছে, এখানে ফেতনা দ্বারা কবরের মুনকার-নাকিরের জিজ্ঞাসাবাদের কথা বোঝানো হয়েছে অথবা কবরের আজাবের কথা বোঝানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু নুআইম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তার হিলয়া গ্রন্থে হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন, ‘যেখানে কবরের আজাবের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।’
রমজানে মৃত্যু :
রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান। কোনো ঈমানদার মুসলমান যদি রমজানের কোনো অংশ পেয়ে থাকে; আর নিজের গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারে তবে তার জন্য পরকালের সুখ-শান্তি ও নাজাত সুনিশ্চিত। আর হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী রমজানে কবরের আজাব বন্ধ থাকে। সে দিক থেকেও রমজানে মৃত্যুবরণকারী পুরো রমজান মাস আজাব বা শাস্তিমুক্ত থাকবে। সুতরাং যেসব ব্যক্তি জুমার দিন ও রমজান মাসে মৃত্যুবরণ করবে আর তারা যদি ঈমান ও আমলি জীবন-যাপন করে মৃত্যুবরণ করে তবে সেসব ব্যক্তির জন্য জুমার দিন ও রমজান মাসই নয় বরং কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে অনাবিল সুখ আর শান্তি। তারা পরকালের জীবনে থাকবে নিরাপদ। এ জন্যই ঈমানদার মৃতব্যক্তির জন্য পরকালে জান্নাতের সুসংবাদে কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, যারা ঈমান আনবে এবং নেক আমল করবে তাদের জন্য নেয়ামত ও সফলতার সুসংবাদ।
কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন :
মুসলিম হোক আর অমুসলিম হোক; যারা সমাজে ভালো ও জনকল্যাণমূলক কাজ করে থাকে, পরকালে তাদের কাজের বিনিময় কী তারা পাবে না ? এ প্রশ্নেরও সহজ ও সুন্দর সমাধান দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। বিষয়টি সুস্পষ্ট। পরকালে যে কোনো নেক আমল তথা ভালো কাজের প্রতিদানের জন্য শর্ত হলো- ঈমান; আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ ঈমান। আল্লাহ এক, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত বান্দা ও রাসুল- শুধু এ বিশ্বাস স্থাপন করবে; তারা দুনিয়ার জীবনের সব নেক আমল তথা ভালো কাজের প্রতিদান পাবে। এছাড়া ঈমানহীন কোনো ব্যক্তির কোনো ভালো কাজের প্রতিদান পরকালে পাওয়া যাবে না। তবে হ্যাঁ, দুনিয়ার নেক আমল তথা ভালো কাজের প্রতিদান দুনিয়াতে কোনো না কোনোভাবে পাওয়া যাবে। আল্লাহ তাআলা সুরা আসর-এ ঘোষণা দিয়ে বলেন-‘সময়ের কসম! নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে।’ (সুরা আসর : আয়াত ১-২) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে এবং সৎ কাজ করে, তাদের অভ্যর্থনার জন্য আছে ফেরদাউস বেহেশত। সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে; ওই স্থানের পরিবর্তে তারা অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হওয়াও কামনা করবে না।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ১০৭-১০৮)
মনে রাখা জরুরি :
জুমার দিন বা রমজান মাসে বা হজের মাসে বা অন্য যে কোনো ফজিলতপূর্ণ দিনে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির এ মৃত্যুর সঙ্গে জান্নাত বা জাহান্নামের কোনো সম্পর্ক নেই। জান্নাত বা জাহান্নামের সঙ্গে সর্ম্পক হলো মানুষের দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা, ঈমান ও ভালো কাজের সঙ্গে। আর এ মৃত্যু পরবর্তী জীবনে ঈমান ও কাজের ভিত্তিতেই ফয়সালা হবে।যে ব্যক্তি সৎকাজ করে ঈমানের সাথে মৃত্যু বরণ করবে সে জুমার দিন মৃত্যুবরণ করুন বা অন্য যে কোনো দিন মৃত্যুবরণ করুন; সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি শিরকের ওপর মৃত্যু বরণ করে সে ব্যক্তি যে কোনো পবিত্র দিন বা মাসে কিংবা যে কোনো পবিত্র স্থানেই মৃত্যু বরণ করুক না কেনো, তার পরিণাম হবে জাহান্নাম। কেননা আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চই আল্লাহ শিরক ক্ষমা করবেন না এবং শিরক ছাড়া অন্য অপরাধের মধ্যে যেগুলো চান তিনি ক্ষমা করবেন।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৪৮) মৃত্যবরণকারী ব্যক্তি যদি মুসলমান হয় তথা তাওহিদ রেসালাত ও আখেরাতে বিশ্বাসী হয়ে পাপের পথে থাকা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে তবে তার পরিণতি আল্লাহর ইচ্ছায় নির্ধারিত হবে। পাপ-পূণ্যের হিসাব-নিকাশের পর আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিতে পারেন। আবার ইচ্ছা করলে ক্ষমাও করে দিতে পারে। এ সবই আল্লাহ তাআলার ইখতিয়ার। একটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈমানের সঙ্গে নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। বিশেষ দিন মাস ও স্থানের কথা চিন্তা না করে নেক আমলের মাধ্যমে পরকালীন জীবনের চিরস্থায়ী শান্তির স্থান জান্নাতের প্রত্যাশা করার তাওফিক দান করুন। জুমার দিন ও রমজান মাসের ঘোষিত সব ফজিলত পেতে নিয়মিত যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।