কোরবানির ঈদ ঘিরে জমে উঠেছে পশুর হাট। ঢাকার দুই সিটিতে বসেছে ২০টি হাট। ক্রেতা-ব্যাপারীর সমাগমে জমেছে হাটগুলো। তবে গরুর দাম গেলবারের তুলনায় এবার বেশি। গরুর পাশাপাশি বিভিন্ন জাত আর আকারের ছাগলও উঠেছে হাটে। তবে এই পশুটির দামও এবার তুলনামূলক বেশি। পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, গরু বিক্রেতারা যে মূল্য চাচ্ছেন তার চেয়ে নিচে নামতে নারাজ। হাটে ছোটমানের গরুর সর্বনিম্ন দাম ৭০ হাজার টাকা। অর্থাৎ বলতে গেলে লাখ টাকার নিচে ভালো মানের একটি কোরবানির পশু মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলা হাট ঘুরে দেখা যায়, দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত দেশি-বিদেশি জাতের গরুতে ভরে উঠেছে হাট। ব্যাপারীরা ব্যস্ত ক্রেতা হাঁকডাকে। ক্রেতা থাকলেও সেভাবে মিলছে না সাড়া। বেশিরভাগ গরুই লাখ টাকার ওপরে। পাবনা থেকে ১২টি গরু নিয়ে এসছেন এরফান আলী। এর মধ্যে একটি ‘টাইগার’। আনুমানিক ১০ মণ ওজনের এই গরুটির দাম হাঁকা হচ্ছে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। এরফান আলী বলেন, ‘এবার বেচা-বিক্রি কমে গেছে। হাটে আসার পর মাত্র দুইটা গরু বিক্রি হয়েছে। ক্রেতাদের তেমন সাড়া মিলছে না। বেশিরভাগ ক্রেতা আসলে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মধ্যে ভালো গরু চাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের পক্ষে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। খরচ বেড়ে যাওয়ায় এক লাখের নিচে ভালো গরু বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।’পাবনার আরেক বেপারী সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাজারে ছোট আর মাঝারি গরুর চাহিদাই বেশি। বড় গরুর দাম বেশি বিধায় চাহিদাটা কম। তবে এখনও ক্রেতা সংখ্যা আশানুরূপ না। বেশিরভাগ মানুষের তো আজ থেকে অফিস ছুটি শুরু। আশা করছি শুক্র শনিবার ভালোভাবে বিক্রি শুরু হতে পারে।’ আফতাবনগর গরুর হাট ঘুরে দেখা গেল, ক্রেতাদের মধ্যে মাঝারি গরুর চাহিদাটা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। তাই ক্রেতা সমাগমও ছিল অন্যদিনের তুলনায় কিছুটা কম। ক্রেতাদের অভিযোগ, ব্যাপারীরা দাম হাঁকাচ্ছেন বেশি। শুধু হাঁকাচ্ছেন তা-ই না, যা দাম বলছেন, সেখান থেকে নামতেই চাচ্ছেন না তারা। হাটে দেখা হয়, রামপুরা ওয়াপদা রোডের বাসিন্দা মোস্তফা জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ব্যাপারীরা এবার দাম বেশি চাইছেন। যা দাম বলছেন তাতেই তারা গরু বিক্রি করতে চান। বাজারে গরু আছে কিন্তু দাম অন্যান্যবারের তুলনায় বেশি।গুলশানের বাসিন্দা রিফাত শাহরিয়ার বলেন, এবার দামটা একটু বেশি মনে হচ্ছে। ব্যাপারীরা তো এক দাম বলেই বসে থাকে। ক্রেতাদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন গরু ব্যাপারীরা। তারা বলছেন, উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তারপর বৈরী পরিবেশে গরু ঢাকায় আনা, পরিবহন খরচ-সবমিলিয়ে ন্যূনতম লাভের দেখা মিললেই গরু বিক্রি করতে চান তারা।দিনাজপুর থেকে ৩১টি গরু নিয়ে এসেছেন সালাম মিয়া। তিনি বলেন, অনেক দিন থেকে পেলে-পুষে গরুগুলোকে বড় করেছি। এখন কাস্টমাররা যে দাম বলেন, সে দামে গরু বেচলে অনেক লস হয়ে যাবে। সালাম মিয়ার কণ্ঠেই সুর মেলালেন নওগাঁ থেকে ৮টি গরু নিয়ে আসা তোবারক আলী। তিনি বলেন, ‘মনে হয় না এবার গরু বেচে লাভ করতে পারুম। খরচ উঠলেই গরুগুলো বেচে চলে যামু।’ আফতাবনগর হাট ঘুরে দেখা গেছে বেশিরভাগ ক্রেতাই খুঁজছেন মাঝারি সাইজের গরু। আর বিক্রেতারাও এ বিষয়টি বুঝে মাঝারি সাইজের গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন বেশি। ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের বাসিন্দা মেহেদী ইসলাম লিটু দুপুর ২টায় এসেছেন আফতাবনগর হাটে। উদ্দেশ্য ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে মাঝারি সাইজের গরু কেনা। কিন্তু ব্যাপারীরা যে দাম চাইছেন তা তার কাছে একটু বেশিই মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্রেতাই মাঝারি সাইজের গরু খুঁজছেন। আর এ সুযোগটিই নিচ্ছেন ব্যাপারীরা। হাট ঘুরে আমার মনে হচ্ছে বড় সাইজের গরুর চেয়ে মাঝারি সাইজের গরুর দাম বেশি। একই কথা বললেন মালিবাগের বাসিন্দা আরশাদ হোসেন। তিনি বলেন, হাটে এবার মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি। মহামারিতে আয় অনেক কমে গেছে। তাই এবার দুই বন্ধু মিলে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে একটি গরু কোরবানি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু এই বাজেটে গরুই পছন্দ হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, প্রয়োজন হলে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করব। না হলে কাল সকালে আবার আসব। কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু বিক্রির কথা থাকলেও আফতাবনগর হাটে নেই স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই। অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক ছিল না। আর হাটে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব রক্ষারও তোয়াক্কা করছেন না ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই। আফতাবনগর হাটের স্বেচ্ছাসেবক রিপন বলেন, ‘ভাই মানুষ যদি নিজের ভালো নিজে না বুঝে আমরা কী করব বলেন। সারাদিন মাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য বলা হচ্ছে কিন্তু কারও কানে মনে হয় কথাগুলো যায় না।’