নম্বর ফরওয়ার্ডের মাধ্যমে নতুন পদ্ধতিতে জালিয়াতি। সুবিধা দেওয়ার নাম করে মোবাইল নম্বর ফরওয়ার্ড করিয়ে হোয়াটসঅ্যাপের (Whatsapp) দখল করছে জালিয়াতরা। চলছে টাকা হাতানোর ছক। আপাতত দু’টি অভিযোগ পুলিশের কাছে এসেছে। এই ব্যাপারে ডিসি সাইবার প্রবীণ প্রকাশ বলেন, “পুলিশের পক্ষ থেকে শহরবাসীকে সতর্ক করা হচ্ছে, যাতে কেউ সাইবার জালিয়াতদের ফাঁদে পা না দেন।” এক পুলিশকর্তা জানান, যদি কোনও অপরিচিত ব্যক্তি নিজেকে মোবাইল সংস্থা বা ‘সার্ভিস প্রোভাইডার’ সংস্থার কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে সাহায্য করার নামে কোনও ‘কোড নম্বর’ ডায়াল করতে বলে, সঙ্গে সঙ্গেই যেন তিনি সেই ফোন এড়িয়ে যান। এক্ষেত্রে সাধারণত জালিয়াতরা ‘স্টার’-এর পর দু’টি বা তিনটি সংখ্যা ও ফের ‘স্টার’ এবং তার পর দশটি সংখ্যা, শেষে ‘হ্যাশ’ ডায়াল করতে বলে। কেউ যেন এই নম্বর ডায়াল না করেন, এমনই সতর্কতা লালবাজারের। পুলিশ জানিয়েছে, শেষ যিনি অভিযোগ জানিয়েছেন, তাঁর মোবাইলে সমস্যা হচ্ছিল। তিনি মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারকে ফোন করে অভিযোগ জানান। দু’দিন পর সেই সমস্যা মিটেও যায়। এর দিন কয়েক পর এক ব্যক্তি মোবাইল সংস্থার কর্মী বলে পরিচয় দেয়। সে মোবাইলের সমস্যার কথা জিজ্ঞাসা করে। ওই প্রৌঢ় সমস্যা নেই জানালে ব্যক্তিটি বলে, সমস্যা যে রয়েছে, তা তাদের কম্পিউটারে দেখাচ্ছে। পরে সমস্যাটি বড় আকার নিতে পারে। সমস্যা মেটাতে স্টার দিয়ে শুরু করে একটি দশ সংখ্যার পর হ্যাশের ‘কোড নম্বর’ তাঁর মোবাইল থেকে ডায়াল করতে বলে। প্রৌঢ় বুঝতে পারেননি যে, ওই দশ সংখ্যার নম্বরটি আসলে একটি মোবাইল নম্বর। ডায়াল করামাত্রই তাঁর মোবাইল নম্বর জালিয়াতদের ওই নম্বরে ‘ফরওয়ার্ড’ হয়ে যায়। তার ফলে তাঁর যাবতীয় কল ফরওয়ার্ড হয়ে চলে যায় জালিয়াতের মোবাইলে। এবার জালিয়াতরা তাঁর হোয়াটসঅ্যাপের দখল নেয়। হোয়াটসঅ্যাপের জন্য ওটিপি যাতে ফোনে আসে, তা জানানো হয়। জালিয়াতের ফোনেই আসে ওটিপি। তার মাধ্যমে হোয়াটস অ্যাপের দখল নিয়ে নেয় জালিয়াত। এবার সাইবার জালিয়াত অভিযোগকারীর হোয়াটসঅ্যাপের ‘কনট্যাক্ট’ ও ‘গ্রুপে’ থাকা বিভিন্ন নম্বরে মেসেজ পাঠিয়ে নিজেকে অভিযোগকারী পরিচয় দিয়ে জানায়, তিনি বিপদে পড়েছেন। তাই তাঁর টাকার প্রয়োজন। তাঁকে এখনই টাকা পাঠালে ভাল হয়। কোন ই ওয়ালেটে টাকা পাঠানো হবে, তা জানানো হয়। এই ক্ষেত্রে প্রৌঢ়র মেয়ে মেসেজ পেয়ে হতবাক হয়ে যান। তার উপর বাবার কল ফরোয়ার্ড হয়ে যাচ্ছে দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি লালবাজারের সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অনেকটা একই পদ্ধতিতে কয়েকমাস আগেও জালিয়াতরা এক যুবতীকে ফাঁদে ফেলেছিল। তাঁর এক পরিচিতর কাছ থেকে টাকাও হাতিয়ে নেওয়া হয়। এই জালিয়াতির পিছনে নাইজেরিয় ও তাদের ভারতীয় সঙ্গী রয়েছে, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। আবার জামতাড়ার জালিয়াতদের থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে। শহরবাসীকে সতর্ক করার সঙ্গে সঙ্গে জালিয়াতদেরও ধরার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।