জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ আক্ষেপের সুরে বলেছেন, দলের কে কি করছেন থাইল্যান্ডে হাসপাতালের বেডে শুয়ে সব খবর নিয়েছি, কিন্তু আমার খবর কেউ নেয়নি। অথচ যাদেরকে দল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে, তারাই আমার নিয়মিত খোঁজ রেখেছেন। মসজিদ, মাজারসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে দোয়া প্রার্থনা করেছেন। শনিবার (২ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে ওয়েস্টিন হোটেলে জাতীয় পার্টি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রওশন এরশাদ বলেন, বড়-ছোট নতুন-পুরাতন সবাইকে লাগবে। দলের বাইরে যারা আছেন বা চলে গেছেন, তাদেরকেও ফিরিয়ে আনতে হবে। সবাইকে একত্রিত করা না গেলে পার্টি শক্তিশালী করা যাবে না। আমরা অনেক পিছিয়ে যাব। তিনি বলেন, অনেক ভালো ভালো নেতাকর্মী দলের বাইরে আছে, তাদেরকে আনতে হবে। নতুন প্রজন্মকে দলে আনতে হবে। আগামী দিনে তরুণরাই তো দলের নেতৃত্ব দেবে। বেগম এরশাদ বলেন, আমি জানি, আপনাদের মনে অনেক ব্যথা। কিন্তু সব ব্যথা জয় করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। পার্টিকে শক্তিশালী করা না গেলে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় টিকে থাকা যাবে না। এসময় তিনি দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা কি বিএনপির সমকক্ষ হতে পেরেছি? নিশ্চয় না। বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, বিএনপি আছে, জামায়াত আছে, এটা মনে রাখতে হবে। দলকে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সমকক্ষ করতে না পারলে রাজনীতিতে টিকে থাকা যাবে না। রওশন এরশাদ বলেন, আবারও চেকআপ শেষে দেশে ফিরে পার্টিকে শক্তিশালী করতে প্রয়োজনে নিজেকে সম্পৃক্ত করবো। যা যা করার দরকার তাই করা হবে। এরশাদ সাহেব তিলে তিলে এই দলটা গড়েছেন। সবাইকে নিয়েই কাজ করতে হবে। এসময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, বিমানবন্দরে এতো মানুষ আমাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছে যে, তা দেখে আমার দু’চোখ বেয়ে জল চলে আসে। পল্লীবন্ধুকে স্মরণ করে রওশন এরশাদ বলেন, এরশাদ সাহেব ওপারে ভালো আছেন। মৃত্যুর আগের রাতে তিনি আমাকে বলেছিলেন, আল্লাহর রসূল আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন। সুবাহনাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ। সকালে খবর আসে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আল্লাহ নিশ্চয় উনাকে জান্নাতবাসী করবেন। কারণ, তিনি ইসলামের খাদেম ছিলেন। ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম করেছিলেন, পবিত্র শুক্রবার ছুটি ঘোষণা করেন। মসজিদ মন্দিরসহ সব উপাসনালয়ের পানি ও বিদুৎ বিল মওকুফ করেছিলেন। এদিকে, এই সভায় জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরসহ পার্টির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানালেও তারা কেউ আসেননি। বেগম রওশন এরশাদের বক্তব্য শেষে সভায় বক্তারা জাতীয় পার্টিতে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে বলে অভিযোগ করে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব রওশন এরশাদকে নেয়ার জন্য আহ্বান জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাপার সাবেক এমপি নূরুল ইসলাম মিলন, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ, জাপার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন রাজু, বিরোধী দলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ ও প্রেসিডয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান প্রমুখ।