এ বছরের এসএসসি পরীক্ষা কবে হবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। সচিবালয়ে আজ বুধবার নিজ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় তিনি সারা দেশে দুই হাজার ৭১৬ বেসরকারি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করারও ঘোষণা দেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিয়মিত বন্যার খোঁজ রাখছি। বন্যায় অনেক শিক্ষার্থী বই হারিয়েছে। আমরা নতুন করে খোঁজ নিচ্ছি, কত জন শিক্ষার্থীর নতুন বই লাগবে। আমাদের কাছে প্রতিবছর স্টকে কিছু বই থাকে। কিন্তু, এবার বন্যায় এত ক্ষতি হবে, সেটা আমাদের বিবেচনায় ছিল না। প্রয়োজন হলে আমরা বই ছাপিয়ে হলেও শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেব। বই হাতে পৌঁছানোর পর অন্তত দুই সপ্তাহ তাদের সময় দিতে হবে।’ এরপর পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এ সময় করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সংক্রমণ অনেক বেড়েছে। টিকা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিন্তু, করোনা বাড়লেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। আমাদের ১২ বছরের বেশি বয়সি শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া আছে। ১২ বছরের কম বয়সিদের দ্রুত টিকা দিতে পারলে হয়তো সেটির প্রয়োজন হবে না। আমরা আপাতত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা ভাবছি না।’ বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকদের অপদস্ত প্রসঙ্গে টেনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সম্প্রীতি খুবই দুঃখজনক বেশ কতগুলো ঘটনা ঘটেছে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, একজন সনাতন ধর্মের শিক্ষককে প্রায় টার্গেট করে নানা ধরনের উসকানিমূলক কথা ছড়িয়ে দিয়ে এবং মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে তাদের আক্রমণ করা হয়েছে। একজন শিক্ষককে হত্যাও করা হয়েছে। আরেক জায়গায় দেখেছি যেটি এতই দুঃখজনক, যে ঘটনাটি নড়াইলে ঘটেছে সে রকম কোনো ঘটনা আমরা নিশ্চয়ই কখনো চিন্তা করতে পারি না। কতগুলো তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। যারা তদন্ত করেছেন, তারা প্রাথমিক একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন মৌখিকভাবে। আমি সেটাও শুনেছি। আমরা যথাযথ ব্যবস্থা এ ক্ষেত্রে গ্রহণ করবো। আমার কাছে মনে হয়, শুধুমাত্র একটা ঘটনা ঘটল আর আমরা প্রশাসনিকভাবে একটা ব্যবস্থা নিলাম, এটা কিন্তু শুধু তাই নয়। এক ধরনের অসহিষ্ণুতা, সেটিকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতা উপজীব্য করে এই অসহিষ্ণুতাকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। আমরা অতীতেও দেখেছি, যখনই দেশে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে তখনই কিন্তু সাম্প্রদায়িকতাকে নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা চাই, আমাদের দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রায়িক দেশ হবে। এখানে শিক্ষকের মর্যাদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল, সেই জায়গাটিকে যারা কলঙ্কিত করছে সেখানে আমাদের শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। একটি জায়গায় যখন একজন শিক্ষককে একটি ছাত্র প্রহার করছে, সেখানে আরও অনেক লোক আশে পাশে ছিল। তাদের কী করণীয় ছিল, আমরা মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক যে করণীয় সেটা কি আমরা ভুলে যাচ্ছি, প্রশ্ন রাখেন তিনি। দীপু মনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমরা যেটি বেশ কিছু দিন থেকে করার চেষ্টা করছি, বিশেষ করে আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমে, আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিকতা বোধ, সহমর্মিতা, একে অপরের প্রতি সম্মান বোধ আমাদের শিক্ষার মূলধারার মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টার করছি। আমি নিজে একজন শিক্ষকের সন্তান হিসেবে লজ্জিত, দুঃখিত শুধু তাই নয় আমি মনে করি আমি সব শিক্ষক, আজকে যারা শিক্ষকরা আছে যে পর্যায়েরই হন…আমি বোধ করি তারা অনেকেই শঙ্কার মধ্যে আছেন। তাদের ক্ষোভ আছে, তাদের কষ্ট আছে। আমরা সবাই তাদের বোধটা অনুধাবন করতে পারছি হয়তো। আমরা তাদের পাশে আছি, আমরা তাদের পাশে থাকতে চাই। এই সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা যেন আর ভূ-লুণ্ঠিত না হয়, শিক্ষকের মর্যাদা যেন সমুন্নত থাকে সেটার জন্য প্রত্যেকের করণীয় রয়েছে। এটি শুধুমাত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা পুলিশ এককভাবে কারো দায়িত্ব হতে পারে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যেগুলো করণীয় আছে এবং সেগুলো সবগুলো আমরা করছি ও করবো। তিনি আরও বলেন, কোনো নীতিমালা করে আমার মনে হয় না কোনো পেশা বা কোনো সম্প্রদায় বা কাউকে নিরাপত্তা দেওয়া যায়। এটি আমাদের সবার করতে হবে। আর আমাদের আইন কিন্তু সব আছে। আইনে কোথাও ফাঁক-ফোকর কিন্তু নেই। এ ধরনের যে কোনো হামলার বিচার করার মতো, তদন্ত করার মতো সব রকম আইনই আছে। কেউ যদি ধর্মীয় কোনো অভিযোগ কারো বিরুদ্ধে তোলে রাস্তা-ঘাটে যে কোনো সময় যে কেউ খুবই অনিরাপদ অবস্থায় পড়তে পারে। আজকে আমার ওপর কোনো হামলা হয়নি কাজে আমার এটি নিয়ে মাথাব্যথা নেই এটি যেন আমরা কেউ না ভাবি। যখন এ রকম একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করে কোনো কোনো মহল তখন দেশের সবাইকেই ছুঁয়ে যেতে পারে কোনো না কোনো সময়, যদি আমরা সচেতন না হই। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং এই অপকর্ম যারা করছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে ও তাদের প্রতিহত করতে হবে, বলেন শিক্ষামন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের দায়িত্বে থাকা মহাপরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।