ইউরোপসেরা ইতালি আর দক্ষিণ আমেরিকার সেরা আর্জেন্টিনার দ্বৈরথে পুরোটা সময়ই আধিপত্য করল আলবিসেলেস্তেরা।। প্রথমার্ধে জোড়া গোল করে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধেও চাপ ধরে রাখল কোপা আমেরিকা জয়ীরা। তাতে এই দ্বৈরথে প্রায় ২৯ বছর পর আবারও চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। বুধবার রাতে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ফিনালিসিমা নামের আলোচিত ম্যাচটি ৩-০ গোলে জিতল আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে লাউতারো মার্তিনেস দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আনহেল ডি মারিয়া। শেষ দিকে তৃতীয় গোলটি করেন পাওলো দিবালা। সবশেষ ১৯৯৩ সালে হয়েছিল ফিনালিসিমা ম্যাচ। সেবার ইউরো চ্যাম্পিয়ন ডেনমার্ককে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আর্জেন্টিনা। প্রায় ২৯ বছর পর আবারও চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। ইউরোপ চ্যাম্পিয়নদের হারানোর মধ্য দিয়ে লিওনেল স্কালোনির দলের মুকুটে যোগ হলো নতুন পালক। ফিনালিসিমার শুরু থেকেই ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামের আশপাশ চলে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা সমর্থকদের দখলে। ৯০ হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামের একটা আসনও ফাঁকা যায়নি। শুরু থেকেই উত্তাপটা টের পাওয়া যাচ্ছিল বৈকি। ম্যাচেও এর ঝাঁজটা ছিল বেশ। শুরুটা আর্জেন্টিনা করেছিল দুর্দান্ত। বলের দখল নিয়ে প্রতিপক্ষ রক্ষণে আক্রমণের পসরাই সাজিয়ে বসেছিল। তবে ইতালিও শুরুর নড়বড়ে ভাবটা কাটিয়ে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় শুরুর দশ মিনিট পেরোতে। প্রথম বড় সুযোগটাও তৈরি করেছিল দলটিই। লিওনেল স্কালোনির অধীনে আর্জেন্টিনা আর যাই হোক রক্ষণে যে বেশ শক্তপোক্ত, তার প্রমাণ মিলেছে গেল কোপা আমেরিকাতেই। তার প্রমাণ ওয়েম্বলিতেও দিলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ আর ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোরা। এমি মার্টিনেজ একটা দারুণ শট ঠেকালেন শুরুতে, ম্যাচের ২০তম মিনিটে আর্জেন্টিনা রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে তৈরি করা বড় সুযোগটাও শেষ মুহূর্তের ট্যাকলে ঠেকিয়ে দিয়েছেন রোমেরো। ২৮ মিনিটে জিওভানি ডি লরেঞ্জোর কড়া পাহারা এড়িয়ে বাম পাশ থেকে আক্রমণে উঠে বল বাড়ান মাঝে থাকা লাওতারো মার্টিনেজের উদ্দেশ্যে। সহজ ট্যাপ ইনে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন লাওতারো। তাতেই ১-০ গোলে এগিয়ে গিয়ে ম্যাচের চিত্রটাই বদলে দেয় আর্জেন্টিনা। এই এক গোলের পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি মেসিদের। এরপর মরিয়া হয়ে গোল শোধের চেষ্টা করে ইউরো চ্যাম্পিয়নরা। আর আর্জেন্টিনা সেসব সামলে প্রতি আক্রমণে উঠে এসেছে। বিরতির ঠিক আগে তেমনই এক প্রতি আক্রমণে দ্বিতীয় গোলের দেখা পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। গোলরক্ষক এমিলিয়ানোর বাড়ানো বল প্রতিপক্ষ অর্ধে লাওতারোকে পেয়ে যায়, সঙ্গে ছিলেন কোপা জয়ের নায়ক আনহেল ডি মারিয়া। লাওতারোর বাড়ানো বল আলতো চিপে ইতালির জালে জড়ান ডি মারিয়া। তাতেই ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধে ইতালির সামনে কাজটা ছিল বেশ কঠিন। সেই মিশনে নামার আগে একসঙ্গে তিন পরিবর্তন করে ইতালি। দেশের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলতে নামা অধিনায়ক জর্জিনিও কিয়েল্লিনির জায়গায় নামানো হয় ম্যানুয়েল লাজ্জানিকে। ইতালিয়ান গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডনারুমার বিরতির পর কম করে হলেও চারটা নিশ্চিত গোলের সুযোগ ঠেকিয়ে দিয়েছেন। যার মধ্যে দুটো ছিল মেসির। প্রথম গোলের যোগান দিলেও শুরুর ৪৫ মিনিটে মেসি খানিকটা নিশ্চুপই ছিলেন যেন। তবে স্বরূপে ফিরেছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে প্রতিপক্ষ বক্সে গিয়ে শট করেছিলেন তিনি, সেটা ঠেকিয়ে দেন ডনারুমা। মিনিট কয়েক পর আবারও তার শট একই পরিণতি পায়। শেষ মুহূর্তে আর্জেন্টিনার জয় যখন মুহূর্তের দূরত্বে, তখন তার সলো রান আটকে দেয় ইতালি রক্ষণ। তখনই মেসি বলটা বাড়ান মিনিট দুয়েক আগে মাঠে নামা পাওলো দিবালাকে। বক্সের সামনে থেকে দারুণ এক ফিনিশে ব্যবধান ৩-০ করেন তিনি। দিবালার গোলের পরপরই বাজানো হয় ম্যাচের শেষ বাঁশি। তখনেই অধিনায়ককে শূন্যে ভাসিয়ে আরও একটি আন্তর্জাতিক শিরোপা জয়ের উল্লাস মাতে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা। এসময় তাদের পরনে ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লেখা জার্সি।