তবে কত আসনে ইভিএম হবে সেই বিষয়ে আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর। রবিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন। ইভিএমের অসুবিধার চেয়ে সুবিধা বেশি দাবি করে মো. আলমগীর বলেন, ইভিএমের কারচুপি নিয়ে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন তা প্রমাণে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেও কেউ সেটা প্রমাণ করতে আসেনি। বিএনপি ইভিএম নিয়ে অভিযোগ তুললেও তারা কোনোভাবে ইসির কাছে লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেনি। যার ফলে তাদের অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি। তবে যেসব দল ইসিতে গিয়ে ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ দিয়েছে, তারা তা যাচাই করছে। ইভিএমে ভোট কারচুপির অভিযোগকে অপপ্রচার দাবি করে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আপনি আমাকে বলবেন, আমি খারাপ। এর তো প্রমাণ দিতে হবে। না হলে আমি খারাপ হিসেবে গণ্য হবো কেন? তার মানে এটা অপপ্রচার। যতক্ষণ না আপনি প্রমাণ দেবেন ইভিএমে ভোট কারচুপি করা যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত তো আমি এটা বিশ্বাস করব না। যারা কারচুরির বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন সেগুলো আমরা যাচাই করছি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, ‘ইভিএম একটি সিস্টেম। ইভিএম ব্যবহার করে বেশ কিছু নির্বাচন হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৬টি আসনে ইভিএমে ভোট হয়েছে। সেটা নিয়ে কোনও চ্যালেঞ্জ হয়নি। বা কেউ বলেননি, ইভিএমে এটা হয়েছে। সংসদের অনেকগুলো উপনির্বাচন ইভিএমে হয়েছে। কেউ বলেননি ইভিএমের কারণে আমি হেরে গেছি। বা চ্যালেঞ্জ করে কোর্টে মামলা করেছেন, সেটাও না। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে ইভিএমে ভোট হয়েছে এটার একটা বিশাল অভিজ্ঞতা আছে আমাদের। আমরা দেখেছি, প্রায় ৬/৭শ’ টি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে। এখানে কোথাও বলা হয়নি ইভিএমের কারণে আমরা ভোটে হেরে গেছি বা জিতে গেছি।’ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার আলমগীর বলেন, ‘ইভিএম ব্যবহার হবে। কিন্তু কত আসনে হবে সেই বিষয়ে আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পরিনি। এটা নিয়ে আমরা মতবিনিময় করছি। আলোচনা করছি। আমাদের সক্ষমতা কী আছে। কত ইভিএম আছে। আমাদের প্রশিক্ষিত জনবল কত আছে ? সাপোর্টিং জনবল কত আছে ? এগুলো দেখছি। এগুলো দিয়ে কত আসনে ভোট করা যাবে। আর যদি বেশি করতে চাই। আরও কত (ইভিএম মেশিন) লাগবে। তাতে কত টাকা লাগবে। এজন্য নতুন প্রজেক্ট নিতে হবে কিনা? সেই সময় আমাদের আছে কিনা? প্রকিওরমেন্ট করতে, প্রশিক্ষণ দিতে এসব নিয়ে আলোচনা চলছে। এই মুহূর্তে ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ভোট করতে পারবো। তবে আমরা কতটি আসনে ভোট করবো, সেটা এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি। সক্ষমতার ওপর সিদ্ধান্ত নেবো।’ ইভিএমের কারচুপির বিষয়ে ইসি চ্যালেঞ্জ দিলেও তাতে কেউ সাড়া দেয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েকবার ওপেন চ্যালেঞ্জ দিলাম। লিখিতভাবে বললাম। সেই চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ তো প্রমাণ করতে পারেনি যে ‘আপনাদের যে ইভিএম তাতে চুরি করা যায়। আমাদের ওই চ্যালেঞ্জ এখনও ওপেন আছে। এটা বন্ধ করিনি। ইভিএমের অনেকগুলো সুবিধাও আছে। যেমন- এতে একজনের ভোট অন্যজন দিয়ে দিতে পারে না। ব্যালটে যেমন একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারে। ইভিএমে সেই সুযোগ নেই।’ ইভিএমের সুবিধা-অসুবিধার কথা উল্লেখ করে মো. আলমগীর বলেন, ‘ব্যালটে ভোটগ্রহণ করে সারা রাত ধরে ভোট গণনা করবেন। একবার ভুল হবে ১০ বার গণনা করবেন। ইভিএমে এসব ঝামেলা নেই। আবার অসুবিধাও আছে, অনেকের আঙুলের ছাপ মেলে না। যাদের আঙুলের ছাপ মেলে না, তাদের জন্য তো একটি পদ্ধতি আছে। অনেকে বিশেষ করে বয়স্করা কীভাবে ইভিএম ব্যবহার করতে হয়, তা বুঝে উঠতে পারে না। মেশিন দেখে তারা ঘাবড়ে যান। অনেক সময় মনে হয়, এটা স্লো। তবে আসলে মেশিনটা স্লো নয়। যারা জানেন তাদের তো ১৫ সেকেন্ড লাগে ভোট দিতে।’ তিনি জানান, অনেক রাজনৈতিক দল ৩০০ আসনে চায়, আবার কোনও কোনও দল একটি আসনেও চায় না। আমরা তো সবার কথা সমানভাবে গুরুত্ব দিতে পারবো না। আমরা আমাদের সক্ষমতা ও ইভিএমের যৌক্তিকতার ওপর গুরুত্ব দেব।