রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল
আসন্ন রমজানে রসেভরা আনারস বেশি দামে বিক্রি করা যাবে- তাই মৌসুমের আগেই বাজারে আনতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক দিয়ে জলডুগী আনারসে পরিপুষ্টের রূপ দেওয়া হচ্ছে। টাঙ্গাইলের মধুপুরের চাষীরা রাসায়নিক ও হরমোন বিষে ভরা আনারস আসন্ন রমজানে বাজারজাতের মাধ্যমে অধিক মুনাফার লোভে এসব করছেন। আগে থেকে নির্ধারিত বাগানে সদ্য ফোঁটা ফুল, রেণু(গুটি) ও আনারসে প্রতিদিন পরিচর্যার পাশাপাশি সপ্তায় সপ্তায় মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক ও হরমোন প্রয়োগ করা হচ্ছে। ফলে ১৮ মাসে পরিপক্ক হওয়ার আনারস মাত্র ৫-৬ মাসেই আকারে বড় হয়ে পূর্ণতার রঙ-রূপ ধারণ করছে।
জানা যায়, মধুপুর গড়াঞ্চলের মাটি সাধারণত দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ। উঁচু-নিচু ঢাল থাকায় পানি না জমার কারণে মধুপুরের মাটি আনরস চাষের জন্য খুবই উপযোগী। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এতদাঞ্চলে প্রতি বছর আনারসের বাম্পার ফলন হয়ে থাকে।
এ এলাকায় সাধারণত জায়াণ্টকিউ ও হানিকুইন জাতের আনারসের চাষ বেশি হয়ে থাকে। জায়াণ্টকিউ স্থানীয়দের কাছে ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। হানিকুইন আকারে অনেকটা ছোট, স্থানীয়দের কাছে এটা জলডুগী নামে পরিচিত। তবে মৌসুমের কিছুটা পরে আশ্বিন মাসে ফলন হয় বলে ‘আশ্বিনা’ নামে তুলনামূলকভাবে কম স্বাদের আনারসও আবাদ হয়। এ বছর ফিলিপাইন থেকে আমদানীকৃত এমডি-২ নামে নতুন জাতের আনারস চাষাবাদে যুক্ত হয়েছে।
মধুপুরের আনারস রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এখানে উৎপাদিত আনারস দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করা হচ্ছে। রসে ভরপুর, খেতে সুস্বাদু ব্যাপক সম্ভাবনাময় মধুপুরের আনারস দিন দিন কৃত্রিম রসে পরিণত হচ্ছে। চারা থেকে পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে নানা ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক ও হরমোন প্রয়োগে আনারস দ্রæত পরিপক্ক করার প্রতিযোগিতা চলছে। কৃত্রিমভাবে দ্রæততম সময়ে পাকানো ও দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণের জন্য মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর ফরমালিন আনরসে মেশানো হচ্ছে। প্রতি বছরের আষাঢ়-শ্রাবণ মাস আনারসের ভরা মৌসুম। এছাড়া আশ্বিন-কার্তিক মাসে তুলনামূলক কম স্বাদের ‘আশ্বিনা’ আনারসের মৌসুম হিসেবে পরিগণিত। তবে ক্ষতিকর রাসায়নিক ও হরমোন ব্যবহার করে প্রায় সারা বছরই আনারস উৎপাদন করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, আষাঢ়-শ্রাবণ আনারসের ভরা মৌসুম হলেও এবার চৈত্র মাসে রমজান শুরু হচ্ছে। রমাজনে সাধারণত ফল-মূলের দাম ও চাহিদা বেশি থাকে। তাই আগাম আনারস বাজারে আনতে অনেকেই বাগানে ফরমালিন ও হরমোন প্রয়োগ করছেন। এজন্য কেউ কেউ আলাদা বাগানও করেছেন। মধুপুর গড়াঞ্চলের সব এলাকায়ই কমবেশি আনারসের চাষ হলেও মধুপুর ও ঘাটাইল উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আনারসের আবাদ হয়।