এফবিসিসিআই কার্যালয়ে আয়োজিত টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশ নেন ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, ইউক্রেন সংকটের কারণে বিশ্বজুড়েই জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যুৎ রেশনিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কৃষি ও শিল্পখাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতেই এ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এজন্য আবাসিক গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধা মেনে নেয়ার আহ্বান জানান জ্বালানি উপদেষ্টা। একই সঙ্গে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ারও তাগিদ দেন। সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস। তিনি জানান, শিল্প ও সেবা খাতে সরকারের আলাদা নজর আছে। বিদ্যুৎ রেশনিংয়ে শিল্প এলাকা বিবেচনায় লোডশেডিং এর পরিকল্পনা করা হলেও গৃহস্থলি এলাকায় কিছু শিল্পকারখানা থেকে যায়; যার জন্য এসব কারখানাকে লোডশেডিং পোহাতে হয়। লোডশেডিংয়ের কারণে কোন কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি। স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, সরকারের উচিত কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেয়া। পরিবেশ ঠিক রেখে কয়লাভিক্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশে। বাংলাদেশও সেদিকে যেতে পারে। তিনি জানান শিল্পোন্নত দেশগুলোর অনেকেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ফিরে যাচ্ছে। বাংলাদেশেরও উচিৎ দেশে কয়লা অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জোর দেয়া। একই সঙ্গে গ্যাস সংকট মোকাবিলায় স্থলের পাশাপাশি, সাগরবক্ষেও অনুসন্ধান পরিচালন, কূপ খননের তাগিদ দেন। এ লক্ষ্যে বাপেক্সকে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানান সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এফবিসিসিআইর প্যানেল উপদেষ্টা ও বুয়েটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন। তিনি জানান, চাহিদা অনুসারে গ্যাস পাচ্ছেনা দেশের শিল্পখাত। এতে শিল্পের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের গ্যাসের ওপর একক নির্ভরতা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে বলে তিনি মনে করেন। দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যাপকভিত্তিতে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম, বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার বাড়ানো-বিশেষ করে নিজস্ব কয়লার ব্যবহার বাড়ানো, সাশ্রয়ী জ্বালানি কৌশল ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি। সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম স্থল ও সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন। ক্রান্তিকালীন সংকট মোকাবিলায় একটি জরুরি তহবিল গঠনের দাবি জানান এফবিসিসিআইর পরিচালক ও বিটিএমএ’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন। কয়লাভিক্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি সমুদ্রে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে গ্যাসের অনুসন্ধানের আহ্বান জানান এফবিসিসিআইর পরিচালক ও এমসিসিআইর সভাপতি মোঃ সাইফুল ইসলাম। জ্বালানি মিশ্রনে বৈচিত্র্য আনার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই’র বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান হুমায়ূন রশিদ। বছরে অন্তত ১০ টি গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের পরামর্শ দেন জ্বালানি বিষয়ক ম্যাগাজিন এনার্জি এন্ড পাওয়ার এর সম্পাদক মোল্লা এম আমজাদ হোসেন। সাবেক অতিরিক্ত সচিব সিদ্দিক জোবায়ের ইপিজেড এর কারখানাগুলোর ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা সহজতর করতে বেপজা’র প্রতি আহ্বান জানান। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ভোলার গ্যাসক্ষেত্র থেকে ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে বলে জানান বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী। তিনি আরো জানান, ২০২৫ সালের আরো ৬১৮ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এজন্য দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা ও পার্বত্য চট্টগ্রামে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে ৫টি অনুসন্ধান কূপ খননের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। সেমিনারে অংশ নেয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি মোঃ আমিন হেলালী। আরও উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন আলমগীর, মোঃ হাবীব উল্লাহ ডন, পরিচালকবৃন্দ, বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান, ও মহাসচিব মাহফুজুল হকসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।