ঢাকা, ৩০ মার্চ, ২০২২ (বাসস): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমসটেক নেতৃবৃন্দকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, কভিড-১৯ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এবং পশ্চিমের রাজনৈতিক সংকটের প্রভাব মোকাবেলায় সদস্য দেশগুলোর পারস্পরিক স্বার্থে এই ফোরামটি হতে পারে একটি কার্যকর হাতিয়ার।
তিনি বলেন, ‘এই সম্মেলন আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করার এবং একাধিক চ্যালেঞ্জের অভিন্ন সমাধান খুঁজে বের করার সুযোগ দেবে।’
শেখ হাসিনা আজ তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে অনুষ্ঠিত পঞ্চম বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন।
বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্ট্রি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) ফোরামের ২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে শেখ হাসিনা এ অঞ্চলের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে একটি টেকসই এবং প্রতিকূলতা সহিষ্ণু বঙ্গোপসাগর অঞ্চল পূনর্গঠনের জন্য অভিন্ন কৌশল খোঁজার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিমসটেক সদস্যভুক্ত ৭টি দেশে ১৫৪ কোটির বেশি লোকের বসবাস, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশের বেশি এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বিশাল জনসংখ্যা কেবল একটি চ্যালেঞ্জ নয়, এটি একটি বড় সুযোগও।’
শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তিন দফা প্রস্তাব রাখেন এবং সকল নেতাদের সহযোগিতায় ১৪টি সেক্টরকে সক্রিয় করে প্রক্রিয়াটিকে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করার আহ্বান জানান।
প্রথম দফায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনগণের স্বার্থে অবিলম্বে বাস্তব সুবিধা নিশ্চিত করতে বিমসটেক এফটিএ, বিমসটেক সেন্টারসমূহ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র, এনার্জি সেন্টার, কালচারাল কমিশন ইত্যাদি, সংযোগ প্রকল্প, বিদ্যুতের গ্রিড লাইন সংযোগে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়ন ও কার্যকর করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
দ্বিতীয় দফায় তিনি বলেন, অন্যান্য সব আইনি উপকরণ এবং নীতি সংক্রান্ত চলমান প্রক্রিয়া যা এখনো সম্পন্ন হয়নি, সে গুলো দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেন।
পরিশেষে তৃতীয় দফায় তিনি উদীয়মান হুমকি মোকাবেলা এবং নতুন সুযোগ গ্রহণের লক্ষে বিমসটেকের বাইরে প্রাসঙ্গিক সংস্থাগুলোর সাথে অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণ করে সৃজনশীল এবং উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ায় জড়িত হওয়ার জন্য সংস্থাটিকে ক্ষমতায়নের পরামর্শ দেন।
শ্রীলঙ্কা ভার্চ্যুয়ালি এই ৫ম বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এই সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘বিমসটেক-টুওয়ার্ডস এ রেসিলেন্ট রিজিয়ন, প্রোসপারাস ইকোনমিকস অ্যান্ড হেলদি পিপলস।’
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ে রাজাপাকসের সভাপতিত্বে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বিমসটেকের সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য নেতৃত্ব দানকারি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বিমসটেক কাঠামোর বাস্তবায়নে সহযোগিতা বাড়াতে নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
সদস্য দেশগুলোর মধ্যে শুল্ক মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা চালুর জন্য ২০১৪ সালে এগ্রিমেন্ট অন ফ্রি ট্রেড এরিয়া (এফটিএ) স্বাক্ষরিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, এক্ষেত্রে এফটিএ’র কিছু অত্যাবশকীয় আইনগত দিক চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সেক্টরাল ওয়ার্কিং গ্রুপের সহযোগিতায় এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড ইন গুডস অ্যান্ড রুলস অব অরিজিন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে আমি নেতাদের সহযোগিতা চাচ্ছি।’
বিমসটেক সহযোগিতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মাল্টিমডেল পরিবহন সংযোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তাঁর দেশ বে অব বেঙ্গল রিজিয়নে বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশকে যুক্ত করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সরকার প্রধান বলেন, তিনি এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের কারিগরি সহযোগিতায় সদস্য দেশগুলোর প্রণীত বিমসটেক ট্রান্সপোর্ট কানেকটিভিটি মাস্টার প্লান গ্রহণে আজ বিমসটেক নেতাদের সাথে খুশি মনে যোগ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ মাস্টার প্লান বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক ঐক্য সহজ করবে।’
অপরদিকে তিনি বলেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য জ্বালানি খাতে সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই কারণে সকলকে উদ্ভাবনী ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য নতুন ও যৌথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
এক্ষেত্রে তিনি ২০১৮ সালের সর্বশেষ সম্মেলন চলাকালে বিমসটেকের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ গ্রিড সংযোজন বিষয়ে সকল দেশের চুক্তি স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এ চুক্তিকে কার্যকর করতে আমরা একত্রে কাজ করতে পারি।’
এ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ গ্রিড সংযোজন বিষয়ে বিমসটেক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এডিবির প্রস্তাবিত কারিগরি সহযোগিতা কার্যক্রমকে তারা স্বাগত জানাতে পারে।