আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক্স ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বাতিলের জোরালো দাবি জানিয়েছে চারটি রাজনৈতিক দল। এছাড়াও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচনের সময় পাঁচটি মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখা, তফসিল ঘোষণার পর থেকে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ারও প্রস্তাব করেছে তারা। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত দ্বিতীয় দিনের সংলাপে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, খেলাফতে মজলিশ ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এই প্রস্তাব দেয়। আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিপতিত্বে চারটি রাজনৈতির দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। আগামী সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে ইসির কাছে বেশ কিছু প্রস্তাবনা দেয় দলগুলো। সংলাপে অংশ নিয়ে ইভিএমের শঙ্কা প্রকাশ করেন বাংলাদশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, ‘ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের মাত্রাতিরিক্ত তৎপরতা বিরোধী দল ও জনগণের মধ্যে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আপনারা সরকারি দলের হয়ে কাজ করছেন কিনা এমন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। বিরোধী দলসহ অনেকগুলো বড় দল নির্বাচন করতে অনীহা প্রকাশ করছে।’ আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসির কাছে ২০টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচনে পাঁচটি মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনারে অধীনে রাখা, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার মতো বেশ কিছু প্রস্তাব করে দলটি। এদিন সকালে সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচনকালীন সময়ে স্থানীয় সরকার, প্রতিরক্ষা, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার প্রস্তাব করে বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট। দলটি মনে করে, নির্বাচনের সময় এই পাঁচটি মন্ত্রণালয় সাংবিধানিক পন্থায় নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনা হলে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। অন্যথায় কমিশনের পক্ষে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়া সম্ভব হবে না।জবাবে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে কমিশন যথাযথ আইনের প্রয়োগ করবে বলে জানান সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই নির্বাচন কমিশন হিসেবে আইন আমাদেরকে ক্ষমতা দিয়েছে, কিছু জায়গায় এখতিয়ার প্রয়োগের সুযোগ আছে, নির্বাচনী আচরণবিধি আছে, নির্বাচন পর্যালোচনা-বিধিমালা আছে। আমরা সেসব মেনে নির্বাচন করবো বলেই আপনাদেরকে সংলাপের আহ্বান করছি। বেশ কয়েকটি বড় দল আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে বিষয়ে খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিজেই সংশয়ে রয়েছেন বলে জানান। সিইসি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ সমমনা আরও কয়েকটি দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা অংশ নেবেন না। তারা নির্বাচনে অংশ নেবে সেই প্রতিশ্রুতি আমরা পাচ্ছি না। এখনও আমরা সংশয় ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে আছি বিএনপি নির্বাচনে আসছে কিনা। এটা এখনো অনিশ্চিত। বিএনপির মতো বড় দল অংশ না নিলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না জানিয়ে সিইসি বলেন, বর্তমান যে সংশয় দেখা দিয়েছে বিএনপি নির্বাচনে আসতে চাচ্ছেন না, আসবেন না প্রথম থেকেই বলে আসছেন। আপনারাও দাবি করেছেন নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয় সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হয়। অংশগ্রহণের বড় অর্থই হচ্ছে দেশের প্রধানতম দলগুলো বড় আকারে অংশ নেবে। বিএনপি যেভাবে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন সেটা অন্যান্য দলের সঙ্গে, বিশেষ করে শাসক দলের সঙ্গে বসে সুরাহা করতে পারে বা একটি ঐকমত্যে পৌঁছতে পারে, তাহলে নির্বাচন হতে কোনো বাধা নেই। সংলাপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। দলটি জাতীয় নির্বাচনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নয়, সর্বদলীয় ‘জাতীয় পরিষদ’ গঠনের দাবি জানায়। এছাড়া দলটির পক্ষ থেকে বিতর্কিত ইভিএম বাতিলের পক্ষে জোরালো দাবি জানানো হয়।