বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ, এখানে চ্যালেঞ্জ আরও বেশি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার অনেক সফলভাবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে বৈরি আবহাওয়া মোকাবেলার জন্যও গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্দের পাশাপাশি কৃষিকে আধুনিক ও যান্ত্রিকীকরণে কাজ করছে। কাজেই, বৈরি আবহাওয়া আমরা মোকাবেলা করতে পারব।’ বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) এ সংলাপের আয়োজন করে। ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন্ড হারভেস্টার দেওয়ায় হাওরে দ্রুততার সঙ্গে ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বৈরি পরিবেশ মোকাবেলায় ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ বিভিন্ন কৃষিযন্ত্র কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে। এই মুহূর্তে শুধু সুনামগঞ্জ জেলায় ৫৭৭টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ধান কাটায় ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলেই বৈরি পরিবেশের মধ্যেও সুনামগঞ্জে এখন পর্যন্ত ৭৭ শতাংশ বোরো ধান কাটা সম্ভব হয়েছে।’ কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘নানান কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে বর্তমান সরকার মঙ্গাকে চিরতরে দূর করেছে। গত ১৪ বছরে মঙ্গাপীড়িত এলাকা, উপকূলীয় এলাকা ও চরাঞ্চলসহ দেশের কোথাও কোনো খাদ্য সংকট হয়নি, মঙ্গা হয়নি। অথচ বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশের বৈরি আবহাওয়াকে নিয়তি বলেই ধরে নিয়েছিল; দেশে প্রতিবছর খাদ্য সংকট হবে, মঙ্গা হবে, দুর্ভিক্ষ হবে- এটি তারা মেনে নিয়েছিল। ২০০১-০৬ পর্যন্ত তাদের শাসনামলে প্রতিবছর দেশে মঙ্গা হয়েছে, মানুষ না খেয়ে থেকেছে এবং না খেয়ে মারাও গেছে।’ কৃষিক্ষেত্রে গবেষণার জন্য বর্তমান সরকার পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আগে কৃষি গবেষণার জন্য আমরা বিদেশের উপর নির্ভরশীল ছিলাম। বিদেশি বা আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার টাকা না পেলে গবেষণা করা যেত না। কিন্তু বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিখাতে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিচ্ছেন। কাজেই, গবেষণার জন্য ফান্ডের কোন কমতি নেই।’ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশকে তুলনা করে বাংলাদেশের অর্জনকে খাটো করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একটি জাতি তার আত্মশক্তি ও আত্মবিশ্বাসের উপর ভর করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। অহেতুক ও ভিত্তিহীনভাবে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা করে আমাদের আত্মবিশ্বাস ও অর্জনকে ছোটো করা হচ্ছে। এটি মোটেই ঠিক হচ্ছে না। আমরা যখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, তখন এরকম ভিত্তিহীন তুলনায় আমাদের উদ্যোক্তারা হতাশ হয়ে পড়বে।’
সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। বিএজেএফের সভাপতি গোলাম ইফতেখার মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। প্যানেল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তার মন্ডল। এ ছাড়া আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, এসিআই এগ্রিবিজনেসের প্রেসিডেন্ট ড. এফ এইচ আনসারী, দি সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসরুর আরেফিন, গ্রীন ডেল্টা ইস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক) সৈয়দ মঈনউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।