করোনা সংকট কাটিয়ে দুই বছর পর অবাধে ঈদ উদযাপন করতে মুখিয়ে দেশবাসী। স্বজনদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে এবার রাজধানী ছাড়ছে দেড় কোটি মানুষ। তবে যাত্রাপথে দুর্ভোগের নাম ফেরিঘাট। তাইতো ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে বাড়ানো হচ্ছে ফেরী, সংস্কার করা হয়েছে ঘাট, এমনটাই বলছে নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা আর যাত্রীদের অসহনীয় দুর্ভোগ নিত্যদিনের চিত্র। বিআইডব্লিউটিসি’র তথ্য অনুযায়ী এ রুটে প্রতিদিন পারাপার হয় প্রায় চার হাজার পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহন। ঈদে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ে তিনগুণেরও বেশী। বাড়ে লঞ্চ পারাপারে যাত্রীর সংখ্যাও। ফলে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট ও অসহনীয় দুর্ভোগ। দৌলতদিয়ায় তিনটি ফেরিঘাটই নদী ভাঙ্গনের শিকার, তাই এবারও পারাপারে দুর্ভোগের আশংকা যাত্রী ও চালকদের। তবে দুর্ভোগ কমাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগের কথা জানিয়েছে প্রশাসন। গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুল হক খান মামুন বলেন, “চারটি ঘাট সচল আছে, আরেকটি ঘাট বিআইডব্লিউটিএ সংস্কার করেছে। এটাও ঈদের আগেই চলাচলের উপযোগী হবে।” কর্তৃপক্ষ বলছে, নদীতে নাব্যতা সংকট নেই, ফেরীও আছে পর্যাপ্ত। যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় থাকবে কড়াকড়ি। বিআইডব্লিউটিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক শাহ্ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ বলেন, “২১টি ফেরির মাধ্যমে আমরা সাচ্ছন্দ্যেই যাত্রী সাধারণকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারবো বলে আশা করছি।” ঢাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গের ২৩ জেলার মানুষ পার হয় মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট দিয়ে। আগে ঈদের সময় এই রুটে ১৮টি ফেরী চলাচল করলেও নাব্যতা সংকট ও পদ্মা সেতুর নিরাপত্তায় কমানো হয়েছে ফেরীর সংখ্যা। তবে পারাপারে গতি আনতে নেয়া হয়েছে কিছু উদ্যোগ। বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, “এখানে ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোর্ড থাকবে। জনগণ খুব সহজেই এই রুটটা ব্যবহার করে চলাচল করতে পারবেন।” এদিকে পদ্মার জাজিরা প্রান্তে আরও একটি ফেরিঘাট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ঈদের আগে এই ঘাট চালু হলে কমবে যাত্রী দুর্ভোগ, এমনটাই মনে করছে বিআইডব্লিউটিএ। নতুন ফেরিঘাট নির্মাণের ম্যানেজার আব্দুল মোতালেব জানান, “চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে ২৫ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে নতুন ফেরিঘাট চালু করা যায়।” যাত্রীদের নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থানে থাকবে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাওয়া নৌ-পুলিশ স্টেশনের পরিদর্শক আবু তাহের মিয়া বলেন, “যদি কোন রকম অভিযোগ আসে বা কোন রকম অনিয়ম ধরা পরে সেক্ষেত্রে আমরা তাৎক্ষণিক আইনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।” পদ্মা সেতুর পূর্ণরূপ উপভোগ করতে ফেরীতে শেষবারের মতো ঈদ যাত্রা করবেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অসংখ্য মানুষ। জুনে পদ্মা সেতু চালু হলে আগামী ঈদে মাওয়া-জাজিরায় থাকবে ভিন্ন চিত্র, থাকবে না দুর্ভোগ, ঈদযাত্রা হবে শুধুই আনন্দের, এ প্রত্যাশা সবার।